পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১১৮

করার জন্য এ্যামবুশ পাতে। শত্রুরা এ এ্যামবুশ এর ফাদে পড়ে যায় এবং সম্পূর্নরূপে পরাস্ত হয়। এ এ্যামবুশে শত্রুদের ৮জন লোক নিহত এবং ১৩জন আহত হয়। এ দুটি এ্যামবুশ এর অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আমাদের হস্তগত হয় এবং শত্রুরা এ এলাকা থেকে চলে যায়।

 এই সময়ে শালদানদীর দক্ষিণে রেলওয়ে ব্রিজ কুটির রাস্তায় বাসারা গ্রামের সেতু মন্দভাগ গ্রামের সেতু সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়া হয়।

 আমাদের হেড কোয়ার্টারে এ খবর আসে যে পাক সেনারা তলুয়াপাড়া ফেরী ঘাট তাদের যাতায়াতের জন্য সাধারনত ব্যাবহার করে থাকে। এ সংবাদ পেয়ে আমাদের একটি প্লাটুনকে ৯ই জুন রাত্রে তলুয়াপাড়াতে পাঠান হয়। এ প্লাটুনটি তলুয়াপাড়া ফেরী ঘাটের নিকট শত্রুদের জন্য এ্যামবুশ পাতে। ১০ই জুন রাত ১১টার সময় শত্রুদের একটি দল সেই ফেরীঘাটে আসে এবং নৌকাযোগে পার হতে থাকে। শত্রুরা যখন নদীর মাঝখানে এ্যামবুশ দলটি সে সময় তাদের উপর গুলি চালাতে শূরু করে। এর ফলে নৌকাটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। পাকসেনাদের ২০ জন লোক হতাহত হয়।

 আমাদের একটি প্লাটুন লে. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ই জুন রাত্রে মিয়াবাজারের দক্ষিনে রাজারমার দিঘী ও জগমোহনপুর কাচারীর শত্রুঅবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। পাক সেনারা এই সাহসী আক্রমনে হকচকিয়ে যায়। আমাদের সৈন্যরা পাক সেনাদের বাংকারে গ্রেনেড ছুড়ে ৮জন পাকসেনাকে নিহত ও ৫জনকে আহত করে। পাকসেনারা বাধ্য হয়ে তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। এরপর আমাদের সৈন্যরা অবস্থানটি দখল করে বাংকারগুলি ধ্বংস করে দেয় এবং শত্রুদের পরিত্যাক্ত অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করে।

 আমাদের ৩টি গেরিলা দল কুমিল্লা ও লাকসামে পাঠানো হয়। ১১ই জুন কুমিল্লাতে গেরিলা দলটি শত্রুদের বিভিন্ন অবস্থানের উপর দশটি গ্রেনেড ছোড়ে এতে পাক সেনাদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং সমস্ত কুমিল্লা শহর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ঐ দিনই চারজন গেরিলার ডেমোলিশন পার্টি জাঙ্গালিয়ার নিকট মাইন পুতে একটি ডিজেল ইঞ্জিন লাইনচ্যুত করে।

 লাকসামে যে গেরিলা দলটি পাঠানো হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিল আবদুল মান্নান। পাকসেনাদের একটি গাড়ীর উপর গ্রেনেড ছোড়ে এবং এতে ৫জন নিহত হয়। এ দলটি লালমাই এর নিকট পাকসেনারা যে ঘরে থাকতো তার ভিতর ২টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতেও পাক সেনাদের যথেষ্ট হতাহত হয়। এর ফলে পাক সেনারা লাকসামে ৭২ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারী করে এবং অনেক নির্দোষ লোকের উপর অত্যাচার চালায়। আর একটি দল লাকসামে পাকসেনাদের উপর গ্রেনেড ছোড়ে। এর ফলে কিছু লোক আহত হয়। আমাদের দুটি এ্যামবুশ পার্টি ফুলতলি এবং মিয়ার বাজারের নিকট ঐ দিনই এ্যামবুশ পেতে রাখে পাক সেনাদের দুটি গাড়ী রাত সাড়ে চারটার সময় ফুলতলীতে এ্যামবুশ এর মধ্যে পড়ে যায়। এ্যামবুশ পার্টি একটা গাড়ীকে ধ্বংস করে। দেয় এবং একটা গাড়ীর ক্ষতিসাধন করে। শেষের গাড়ীটির ভিতর এ্যামবুশ পার্টি ২টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শত্রুদের ৬জন লোক নিহত হয়। মিয়ার বাজারের এ্যামবুশেও পাকসেনাদের ৫জন লোক নিহত হয় এবং আমাদের এ্যামবুশ পার্টি একটি মর্টার দখল করে নেয়।

 আমাদের কাছে সংবাদ আসে যে, ওয়াল্ডং ব্যাংক টিম জুন মাসে ঢাকাতে আসছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে সরেজমিনে ঘটনাবলী অবগত হওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রচারযন্ত্র সমস্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বুঝাতে চেষ্টা করছিল যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ খবর পাওয়া মাত্র আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টিমটির অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যদি পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য দেয়, তাহলে সেই আর্থিক সাহায্যে পাকিস্তানের সমরাস্ত্র কেনার ও যুদ্ধ পরিচালনার