পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৩১

 ২৫শে মার্চ সন্ধ্যাবেলায় কুমিল্লা থেকে নির্দেশ আসল যে, আরো লোক আসছে তাদের থাকার ও খাবার ব্যাবস্থা করতে হবে। আমরা থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করেছি কিন্তু আমরা জানতাম না কারা আসছে। রাত আটটার সময় দেখলাম যে লেঃ কর্নেল মালিক খিজির হায়াত খান কুমিল্লায় অবস্থিত চতুর্থ বেঙ্গলরেজিমেণ্টের বাকি কোম্পানীগুলো নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে উপস্থিত হয়েছেন। এসে তিনি বললেন যুদ্ধ আসন্ন। সেজন্য ব্রিগেড কমাণ্ডার তাঁকে কুমিল্লা থেকে চতুর্থ বেঙ্গলের প্রায় সব লোক নিয়েই পাঠিয়ে দিয়েছেন।

 খিজির হায়াত খানের আসার পর চতুর্থ বেঙ্গলের অবস্থান নিম্নরূপ ছিলঃ

 (ক) এক কোম্পানী সমশেরনগরে- যার কমাণ্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ।

 (খ) তিন কোম্পানী- হেডকোয়ার্টার কোম্পানী আর ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার- ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে।

 (গ) ৭০/৮০ জন লোক কুমিল্লায় ইউনিট লাইন-এর প্রহরায় নিয়োজিত।

 (ঘ) এক প্লাটুন কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ গ্রীড স্টেশনের প্রহরায়। এর কমাণ্ডার ছিল নায়েব সুবেদার এম, এ, জলিল।

 খিজির হায়াত খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছেই ২৫শে মার্চ রাত এগারটায় আমাকে হুকুম দিলেন যে, আমি যেন আমার কোম্পানীর সৈন্য নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৩ মাইল দূরে শাহবাজপুর পুলের কাছে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করি। রাত দু'টার সময় রওনা হয়ে তিনটায় শাহবাজপুরে পৌঁছি।

 সকাল ছটার সময় (২৬শে মার্চ) আবার খবর আসল, কোম্পানী ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে ফেরত যেতে হবে। দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।

 সকাল সাতটায় রওনা হয়ে দশটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছি। দশ মাইল আসতে তিন ঘণ্টা লাগে, কেননা জনসাধারণ বড় বড় গাছ রাস্তার উপরেফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।

 ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পৌঁছে দেখি সেখানে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়েছে। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছার সাথে সাথে খিজির হায়াত খান আমাকে পুলিশ লাইনে গিয়ে তাদেরকে নিরস্ত্র করার নির্দেশ দিলেন। আমি তাঁকে বললাম যে নিরস্ত্র করতে গেলে খামাখা গণ্ডগোল, গোলাগুলী হবে। তার চেয়ে আমি নিজেই গিয়ে পরদিন ওদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে আসার অঙ্গীকার করলাম। খিজির হায়াত খান প্রথমতঃ চেয়েছিলেন যে মেজর সাদেক নেওয়াজ গিয়ে প্রয়োজনবোধে শক্তি প্রয়োগ করে পুলিশদের নিরস্ত্র করুক। আমি অনর্থক রক্তপাত এড়ানোর জন্য খিজির হায়াত খানের কাছে এক মিথ্যা অঙ্গীকার করলাম যে আমি নিজে গিয়ে পরদিন ওদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে আসব। তিনি আমার কথায় রাজী হলেন।

 ২৬শে মার্চ বেলা বারটার সময় চতুর্থ বেঙ্গলের সিগনাল জেসিও নায়েব সুবেদার জহীর আমাকে বললেন যে তিনি অয়ারলেস ইণ্টারসেপ্ট করে দুটো স্টেশনের মধ্যে এই কথোপকথন শুনেছেন। তাকে খুব চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল।

 ইণ্টারসেপ্টেড মেসেজগুলো ছিলঃ (1) Send tank ammunition (2) Send helicopter to evacuate casualties (3) 50 boys of East Bengal Regimental Centre have deserted...some with weapon and some without weapon.

 এ সমস্ত মেসেজ পেয়ে আমার জুনিয়র অফিসারগণ লেঃ হারুন, লেঃ কবীর, লেঃ আখতার খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন আমি সিগনাল সেটে গিয়ে মেজর খালেদ মোশাররফের সাথে যোগাযোগ করি এবং অল্প চেষ্টায় তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ হয়ে যায়। আমি তাঁকে চোস্ত ঢাকাইয়া বাংলায় ঐ মেসেজগুলো শুনাই এবং তাঁর