পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৪১

পাকসেনা মরা যায়। এ সংবাদ যখন পাসেনারা অয়ারলেসে তাদের হেড অফিসে প্রেরণ করছিল তখন বেঙ্গল রেজিমেণ্ট তাদের অয়ারলেসের মাধ্যমে সঠিকভাবে জানতে পারল যে, বেঙ্গল পাকবাহিনীর সাড়ে তিনশ' সৈন্যকে হত্যা করেছে। এত সৈন্য মরার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায় যার পরবর্তী ২/৩ মাস তারা আর আক্রমণ করে নাই।

 এপর আমার বাহিনী আখাউড়া বি-ও-পিতে ডিফেন্স নেয়। পরে আমার অধীনে দু'জন লেফটেন্যাণ্ট নিয়োগ করা হয়। একজন ক্যাডেট অফিসার হুমায়ূন কবীর। তার এলাকা ছিল কসবা। তিনি কসবাতে সাবসেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন। অপরজন লেন লেফটেন্যাণ্ট হারুনার রশীদ। তিনি নসিঙ্গরে সাবসেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন। হারুন ও কবীরের কাছে এক কোম্পানী ও আমার কাছে দুই কোম্পানী সৈন্য ছিল। কোন সময় কসবা রেলস্টেশন ও কসবা নতুন বাজার পাকবাহিনী দখল করতে পারেনি। এবং নসিঙ্গরের কালাছড়া টি এস্টেট প্রায় সব সময় মুক্তিবাহিনীর অধীনে ছিল। আমি প্রত্যেক দিন একবার করে তিনটি ক্যাম্প পরিদর্শন করতাম।

 ১৭ই এপ্রিল রাত ১১/৩০ মিনিটে মেজর শাফায়াত পামিল ও আমিসহ পাঁচজন অফিসার ও ৬০ জন সৈন্য নিয়ে আখাউড়া পাকবাহিনীর সেনাদের দখলে ছিল। ব্রীজ উড়িয়েছিল ৬৫ জন বেঙ্গল রেজিমেণ্ট সৈন্য। তারা অক্ষত অবস্থায় আখাউড়া বি-ও-পি' তে ফিরে আসে।

 কর্নেল বাজার অপারেশনও জুন-১৯৭১: আখাউড়া পতন হওয়ার পর বাংলাদেশ বাহিনী কর্নেল বাজারে জড়ো হয়। বাংলাদেশ বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পাক সৈন্যদের হত্যা করে সংখ্যা কমানো। তাই তারা ওখানে রয়ে গেল। পাকবাহিনীর সৈন্য ছিল এক কোম্পানী আর বাংলাদেশ বাহনীর ৩টি কোম্পানী ছিল। তার ভিতর একটি ছিল অনিয়মিত বাহিনী।

 আগরতলা থেকে যে রাস্তা গঙ্গাসাগরের দিকে গিয়েছে ঐ রাস্তার উত্তর মুখ হয়ে বাংলাদেশ বাহিনীর সেনারা ডিফেন্স নেয়। ঐ রাস্তার উত্তর দিকে একটি খাল ছিল। পাকবাহিনী আখাউড়া থেকে কর্নেল বাজারের দিকে অগ্রসর হয় উত্তর দিক থোকে। তারা খাল পার হয়। রাতের বলায় এসে পূর্বদিকে অর্থাৎ বাংলাদেশ বাহিনীর পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে। এর ফলে বাংলাদেশ বাহিনীর সেনারা ছত্র ভঙ্গ হয়ে পড়ে তারা ছিল অনিয়মিত বাহিনী। যা কিছু সৈন্য ছিল তাদের মধ্যে হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। ফলে বেয়নেটের আঘাতে বাংলাদেশ বাহিনীর ৭ জন সৈন্য শহীদ হয়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বাহিনীর অনিয়মিত সৈন্যদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা যার যার মত নানা দিকে চলে যায়।

সশস্ত্র প্রতিরোধে কুমিল্লা

সাক্ষাৎকারঃ মেজর ইমামুজ্জামান[১]

১০-১-১৯৭৪

 মেজর খালেদ মোশাররফ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের এক কোম্পানী সৈন্য আমার নেতৃত্বে দিয়ে কুমিল্লা- চাঁদপুর সড়কে (লাকসামের কাছাকাছি) এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ৬৫টা কনভয় আমরা এ্যামবুশ করি। এতে ৫টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়, বাকি গাড়িগুলো কুমিল্লাতে ফিরে যায়।

 এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালায় (বাগমারায়)। আমাদের অস্ত্রশস্ত্র তখনও প্রচুর ছিল না। ভারতও তখনো আমাদের অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছিল না। দু'দিন


  1. ১৯৭১ সালের মার্চে কুমিল্লা সেনানিবাসে লেফটেন্যাণ্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বংল একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত ।