পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৪২

পর্যন্ত আমরা তীব্র প্রতিরোধ করলাম। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পিছু হাটতে বাধ্য হলাম। ওদের প্রায় ২৭০ জন মারা গিয়েছিল- মৃত দেহগুলি গাড়ীতে (৭/৮ ট্রাক) উঠবার সময় আমরা দেখতে পেলাম।

 এপ্রিলের ২১ তারিখে আমরা লাকসাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হলাম। চাঁদপুরে তখন পাকিস্তান বিমানবাহিনী বোমাবর্ষণ শুরু করে। লাকসাম থেকে আমরা মিয়ার বাজারে চলে গেলাম। এপ্রিলের ২৭ তারিখ পাকিস্তান সেনাবাহিনী মিয়ার বাজারে আক্রমণ করে। ঐ যুদ্ধে ওদের অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছিল। ধানক্ষেতে পানির মধ্যে অনেক সৈন্যের লাশ পাওয়া গিয়েছিল।

 এপ্রিলের ২৯/৩০ তারিখে ওরা আবার আক্রমণ চালায়। ওদের দুটো আক্রমণই বীরত্বের সাথে প্রতিহত করা হয়। আমাদের পক্ষে অনেকেই হতাহত হয়।

 আমি কাদের চৌধুরী নামে মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাপ্টেনকে মিয়ার বাজারের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দিয়ে খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামে চলে আসি এবং ডাকাতিয়া নদীর পারে পরিকোট নামক জায়গায় প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করি।

 মে মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নদীর ওপারে বাংগোড়া বাজারে আসে এবং বেশ গোলাগুলী করে। কিন্তু আমাদের শক্তিশালী ঘাঁটির কথা জানতে পেরে ওরা লাকসাম চলে যায়। মে মাসের ১৪ তারিখ পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় নদীর ওপার থেকে আমাদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই।

 আমরা চৌদ্দগ্রাম চলে আসি। গোলন্দাজ বাহিনীর ভারী গোলাবর্ষণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা ভারতের রাধানগরে চলে আসি। আমাদের কোন সরবরাহ ছিল না। ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। গুলির অভাব ছিল।

 চৌদ্দগ্রাম থেকে মিয়ার বাজার পর্যন্ত সড়কে পাকিস্তানীরা যাতায়াতের চেষ্টা করে। ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। প্রায় সমস্ত পুল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। বন্ধুরা দৌলতপুর থেকে ছাগলনাইয়া পর্যন্ত জুন মাসের প্রথম দিকে মেজর জিয়ার সেনাবাহিনী এবং ২নং সেক্টরের সেনাবাহিনী সম্মিলিতভাবে একটা মজবুত প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরী করেছিল।

কুমিল্লা- নোয়াখালীর সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার মেজর লুৎফর রহমান

১৮-৯-১৯৭৩

 ৩০শে অথবা ৩১শে মার্চ (১৯৭১) সুবেদার সিরাজুল হককে সঙ্গে নিয়ে আমি চৌমুহনী পৌঁছি। এখানে পরিষদ সদস্যদের সাথে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়। নূরুল হক ও অন্যান্য সদস্যগণ ঢাকাসহ প্রদেশের সমস্ত জায়গায় পাক পশুশক্তির বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন এবং বহু প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ শুনি। তারা সবাই আমাকে যে কোন প্রকারে যোদ্ধা সংগ্রহ করে শত্রুর উপর পাল্টা আঘাত হানার প্রস্তুতি নিতে বলেন। তারা সর্বপ্রকার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দেন এবং আমাকে মাইজদীতে নিয়ে যান। সেখানে তৎকালীন এম-এন-এ এমপিএ' দের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

 ২রা এপ্রিল অতঃপর আমি ফেনীতে গিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান (বর্তমান ব্রিগেডিয়ার, ডেপুটি চীফ অব স্টাফ, বাংলাদেশ আর্মি) সাহেবের সঙ্গে বিভিন্ন পরামর্শ করি। মেজর জিয়াউর রহমান সাহেব আমাকে কালবিলম্ব না করে নোয়াখালীতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং বাঘমারায় শত্রুকে বাধা দিতে নির্দেশ করেন। তিনি

[১]


  1. বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত।