পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৬৭

 হচ্ছে। সে ব্যাটালিয়নে পৌঁছার সাথে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়। তখন আমি ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারকে বলি যে, ঢাকা থেকে আপনি কোন নির্দেশ পাচ্ছেন না। ব্যাটালিয়নের পরিস্থিতিও খারাপ। আমরা যদি কোথাও কনসেনট্রেট না হই তাহলে পরিস্থিতি হয়ত আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। আমি তাকে আবার বললাম যে, আমরা আমাদের সৈনিকদের নিয়ে টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহ চলে যাই। তিনি উত্তরে বললেন যে আমার ছেলে পিলে আছে। বেলা প্রায় দু'টোর দিকে ঢাকা থেকে বিগ্রেড কমাণ্ডার বিগ্রেডিয়ার জাহানজেব আরবাব ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার-এর সাথে অয়ারলেসে কথা বললেন এবং বললেন, “our troops are facing some difficulties at Tongi, Send a company to do some shooting.” আমাকে ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার জিজ্ঞেস করলেন, কি করা যায়? জয়দেবপুরে তখন শুধু একটা রাইফেল কোম্পানী ছিল, যার কমাণ্ডার মইনুল হোসেন চৌধুরী। ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার রকীব বললেন এই কোম্পানীকে পাঠাবার জন্য। আমি তখন বললাম যে এখন এই কোম্পানীকে না পাঠিয়ে টংগীর খবর নিন। একজন পাঞ্জাবী অফিসার পাঠাতে বললাম। গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে আমাদের যে কোম্পানী ছিল তার কমাণ্ডার ছিল একজন পাঞ্জাবী অফিসার। আমি তাকে পাঠাতে বললাম। ড্রাইভার এবং বাকী লোক ছিল বাঙালী। ঐদিনই আমরা টঙ্গীতে বেশ কিছু বড় বড় গোলার আওয়াজ শুনি। অফিসারকে আর অন্যান্যদেরকে পৃথক পৃথক ব্রিফ করে টঙ্গী থেকে খবর আনার জন্য পাঠানো হয়। বিকেলে টঙ্গী থেকে ফিরে আসার পর ঐ অফিসার কমাণ্ডিং অফিসারকে খবর দেয় যে সেখানে তেমন কিছু হয়নি। কিছুসংখ্যক জনতা টঙ্গী পুলের কাছে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে কিছু গোলাগুলি হয়েছে। সে এও বলল যে, “Since there was a barricade near Tongi Bridge the troops from Dacca did some sporadic Firing. Incidentally I was also challenged by the Dacca troops.” ড্রাইভার বলল যে আমরা টঙ্গীতে যাবার সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা আমাদের সবাইকে (আমাদের অফিসারসহ) দুই হাত উপরে উঁচু করে বেয়নেটের ডগায় অফিসারের কাছে নিয়ে যায়। আমাদের সৈনিকদের সবাই ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল। অফিসারকে যখন তারা উঁচু করায় (হ্যাণ্ডস-আপ) তখন অফিসার পাঞ্জাবী ভাষায় তাদের তিরস্কার করছিল। তার কথা শুনে পাঞ্জাবী সিপাইগুলো বলছিল, “দেখ, শালা পাঞ্জাবী ভি সিখ লিয়া।” এখন মনে হয় তাকে বাঙ্গালী অফিসার মনে করে হাত উঁচু করিয়েছিল। এইভাবে হাত উঁচু অবস্থায় তাদের অফিসারদের সামনে যাবার সাথে সাথে তারা (তাদের অফিসাররা) দুঃখ প্রকাশ করে। আমাদের অফিসার তাদের সাথে ঘণ্টাখানেক আলাপ-আলোচনার পর ফিরে আসে।

 আমি এই ঘটনা ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডারকে বলি এবং এও বলি যে, “Sir, it is about time that we take some actions, otherwise it will be too late, “তিনি তখন বললেন আমি কি করতে পারি? আমি তাকে বললাম, “If you are so afraid of taking any action then I am going to take some actions. As far as your safety is concerened you can go to cantonment and tell them that thay (2 E Bengal pers) have all gone and no one listens to you. You will not be blamed for it as you have come only two days before. Neither you know the troops, nor they know you. If you want we will tic you and leave in one of the rooms and the Dacca authorities will not doubt you.” এ কথা বলার পর আমি উনাকে একটু চিন্তা করে দেখতে বললাম এবং বললাম আমি সমস্ত অফিসার জেসিও'দের এ ব্যাপারে ব্রিফ করছি। যে পাঞ্জাবী অফিসার টঙ্গীতে খবর নিতে গিয়েছিল সে গাজীপুর ফিরে না গিয়ে জয়দেবপুরে চলে আসে। জয়দেবপুরে আরো দুইজন পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসার এবং কিছুসংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য ছিল। তাদের মধ্যে গোপনে শলাপরামর্শ চলছিল। আমি এটা লক্ষ্য করেছিলাম। তাই এ অফিসারকে রীতিমত অর্ডার করে গাজীপুর পাঠিয়ে দিই।

 ২৭শে মার্চ সন্ধ্যার দিকে কিছু লোক ঢাকা থেকে আসে। তাদের মুখে শুনতে পাই যে ঢাকাতে বেশকিছু হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর আগে ড্রাইভার ছাড়া আর কারো কাছে শুনতে পাইনি। ২৭শে মার্চ সকালে একজন লোক ধীরাশ্রম থেকে জয়দেবপুরে আসে। সে খবর নিয়ে আসে যে কর্নেল সালাউদ্দিন মোঃ রাজা ধীরাশ্রম রেলওয়ে