পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১৯৯

 আনুমানিক ৮ই অথবা ৯ই এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী নরসিংদী দখল করে নেয়। ১৬ই এপ্রিল ভোরে ৫টার সময় পাকিস্তানী বিমান বাহিনী হঠাৎ আশুগঞ্জে আমাদের উপর বোমাবর্ষণ শুরু করে ৬টা স্যাবর জেট দ্বারা। সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে আমাদের তখন তুমুল যুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানী সৈন্য ভৈরব ব্রীজের পশ্চিম দিকে ছিল এক ব্যাটালিয়ান। এক কোম্পানী প্যারাস্যুটে নামিয়ে দেয় আশুগঞ্জ শহরে। অন্য একটি ব্যাটালিয়ন পাঠায় লালপুর। সকাল আটটার সময় আমরা তিনদিক থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হই। তখন তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বেলা তিনটে পর্যন্ত যুদ্ধ অনবরত চলতে থাকে। আমাদের ১০/১২ জন সৈন্য ঐ যুদ্ধে শহীদ হন। ১৫/১৬ জন আহত হন। আমি এবং মেজর নাসিমও সামান্য আহত হই। অন্যপক্ষে পাকিস্তানী এক প্লাটুন সৈন্য যুদ্ধে নিহত হয়।

 মেজর কে এম শফিউল্লাহকে জানালাম আমাদের পরিস্থিতি। তিনি আমাদেরকে সৈন্য তুলে নেওয়ার কথা বললেন। আমরা সৈন্য তুলে নিয়ে তালশহরে যাই। তালশহরে পৌঁছবার পর ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় মেজর শফিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করি। এমন সময় একজন মুক্তিবাহিনীর ছেলে একটা হোণ্ডা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমি উক্ত হোণ্ডায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মেজর শফিউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যাই। কেননা আমি তখন আহত। মেজর শফিউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে তেলিয়াপাড়া যাবার পরামর্শ দেন। আমি ঐদিন সন্ধ্যায় তেলিয়াপাড়া হেডকোয়ার্টারে পৌঁছি।

 তেলিয়াপাড়ায় আমাকে জানানো হলো মাধবপুরে ডিফেন্স দেওয়ার জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও তেলিয়াপাড়ার মাঝখানে মাধবপুর। মাধবপুরে ২৫শে এপ্রিল আমরা আবার ডিফেন্স তৈরি করি। এবং শাহবাজপুর ব্রীজ ভেঙ্গে দিই। আমি অত্যন্ত অসুস্থ হওয়ায় আগরতলা হসপিটালে চলে যাই। হসপিটালে দু'সপ্তাহ থাকতে হয়। ১লা মে আমি আবার তেলিয়াপাড়া পৌঁছি। তখনও মাধবপুরে আমাদের ডিফেন্স ছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তখন শাহবাজপুর পর্যন্ত পৌঁছেছে। তেলিয়াপাড়ায় মেজর শফিউল্লাহ আমাকে এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শাহবাজপুর পাঠান পাকিস্তানী সৈন্যদের রেইড করার জন্য। তেলিয়াপাড়া থেকে মাধবপুর হয়ে শাহবাজপুর পৌঁছতে আমার এক রাত দুই দিন লেগে যায়।

ময়মনসিংহ-ঢাকা সিলেটের সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ

সাক্ষাৎকারঃ মেজর এম, এ, মতিন[১]

১২-৪-৭৩

 ২৯শে মার্চ ২য় বেঙ্গল জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জে আসে। মেজর মইনুল হাসান, মেজর নূরুল ইসলামও ছিলেন। আমি তাদের সাথে দেখা করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেবার জন্যে। তখনই বাড়ি গিয়ে মা-বাবা কে বলে চলে আসি। পাকবাহিনী কি করে আমাদের সবার খবর পেয়েছিল। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে পাক বিমান এসে ভৈরবের ওখানে বোমা ফেলে এবং কিশোরগঞ্জের উপর দিয়ে উড়ে যায়।

 রাত ১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে রওনা হই। আমরা সংখ্যায় ৮০০'র উপরে ছিলাম। সেকেণ্ডে বেঙ্গলের পুরা ব্যাটালিয়নসহ বিস্তর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাত্রা করি।

 ৩০শে মার্চ ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছাই। ওখান থেকে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে (সিলেট) যাই সকাল ৮টার দিকে। ওখানে মেজর খালেদ মোশাররফ আগে থেকেই ছিলেন। মেজর মোশাররফ চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট নিয়ে ছিলেন। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। দুটি বেঙ্গল রেজিমেণ্টের হেডকোয়ার্টার ওখানে করি। দুটি


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংগৃহীত।