পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২১২

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ ময়মনসিংহ

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৫। ময়মনসিংহ ও অন্যান্য এলাকার সশস্ত্র প্রতিরোধের বিবরণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র …………………১৯৭১

ময়মনসিংহ শহর ও অন্যান্য স্থানের প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার এ,কে,এম ফরিদউদ্দিন

১০-১-১৯৭৫

 বিগত ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে আমি আমার ইপিআর-এর ‘সি’ কোম্পানীসহ ২নং উইং হেডকোয়ার্টার ময়মনসিংহে ছিলাম।

 ২৫শে মার্চ তারিখে তৎকালীন প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগ, টিক্কা খানের রেডিও ভাষন ও আদেশ এবং পাক সামরিক বাহিনীর পিলখানা, রাজারবাগ আক্রমনের খবর ময়মনসিংহে পৌছার সাথে সাথে ময়মনসিংহের ইপিআর-এর বাঙ্গালী যুবকরা তাদের ভবিষ্যৎ বুঝিতে পারে। অন্য দিকে তৎকালীন ২নং ইপিআর উইং-এর কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন কমর আব্বাসের জোয়ানদিগকে আরাম করার আদেশ হইতে পরিস্থিতি আরও পরিস্কার হইয়া উঠে যে বাঙ্গালীদের ভাগ্যকাশে ঘনঘটার ছায়া জুরিয়া বসিয়াছে।

 ২৭-৩-৭১ তারিখে সকাল বেলা ক্যাপ্টেন কমর আব্বাস আমাকে অফিসে ডাকাইয়া আদেশ দেন যে,আপনারা প্রায় এক মাস যাবৎ স্ট্যাণ্ডবাই ডিউটি করিতেছেন, এখন স্ট্যাণ্ডডাউন করিয়া আরাম করেন। তাহাতে আমি তার সাথে একমত না হওয়ায় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ঐ সময় একটি জীপে করিয়া বেশ কিছু এম্যুনিশন ক্যাপ্টেন সাহেবের বাসায় নিয়া যাওয়ার সময় আমার মনের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যে, আমাদের উপর হামলা হইবে। তারপর আমি উইং হেডকোয়ার্টারের কয়েকজন বাঙ্গালী এনসিও, যথা হাবিলদার আরিফ, হাবিলদার সিরাজ, হাবিলদার আহাম্মদ মিয়া ও হাবিলদার আঃ হাকিমকে নিয়া একটি গোপন বৈঠক করিয়া সিদ্ধান্ত নিই যে, হাতিয়ার দেব না। এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কোত হইতে হাতিয়ার এম্যুনিশন আরও যাহা ছিল বাহির করিয়া জোয়ানদের মধ্যে বিতরন করিয়া দেই এবং যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য হুকুম দিই। সমস্ত বাঙ্গালী জোয়ানরা নতুন করিয়া শপথ নিয়া মরণ পর্যন্ত হাতিয়ার দিবে না বলিয়া আমাকে আশ্বাস দেয়।

 সারা দিন দুই পক্ষের লোকদের মধ্যে একটা অবর্ণনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করে। ইতিমধ্যে অবাঙ্গালী ফোর্স, যাহাদের মধ্যে ইপিআর, এয়ার ফোর্স, জিডি ট্রুপস, আর্মি সিগন্যাল, মুজাহিদ ইন্সট্রাক্টর এবং আর্মি সিকিউরিটি মিলিয়া প্রায় ১৩৮জন ছিল। তাহারা একটা গোপন বৈঠক করে। ইহার খবর পাইয়া বিকাল অনুমান ৪টার দিকে আমি দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ‘সি’ কোম্পানী, যাহা খাগড়হর ইপিআর ক্যাম্পে ছিল, তাহার কমাণ্ডার তৎকালীন মেজর নূরুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোচনা করি। সমস্ত গোপনীয় সংবাদ, যাহা আমার জানা ছিল, তাহাকে অবগত করাই এবং আগে আমাদের এ্যকশনের জন্য পরামর্শ করি এবং তাঁহার সহযোগীতা কামনা করি। তারপর অনুমান সাড়ে ছয়টার সময় ক্যাপ্টেন কমর আব্বাসকে সাথে নিয়া আসিয়া আমার বাঙ্গালীদিগকে ফল-ইন করিতে হুকুম দেন, কিন্তু আমি অল্প কিছু লোক যাহারা সামনে ছিল তাহাদেরকে একত্র করিয়া মেজর সাহেবকে আলাপ করিতে দেই। মেজর সাহেব বলেন যে একটি কোম্পানী বা একটি উইং কি করিয়া পাক আর্মির বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করিতে পারে বা বাঁচার জন্য তৈরী হইতে পারে? যাহোক, মেজর সাহেব আমাদেরকে অভয় দেন যে কোন বিপদ হবে না, ভুল চিন্তা করিবেন না। কিন্তু ঐ সময় আমি দেখিতে