পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৩৩

অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায় সকাল ৯/১০টার সময়। আমাদের পার্টি পাল্টা আক্রমণ চালায়। যুদ্ধ আধঘণ্টা স্থায়ী হয়। পাকসেনারা পিছু হটে যায়। এরপর ভারতীয় বিএসএফ ভারতে চলে যায়। আমরা ইপিআর-রা শেওলাতে গেলাম।

 ২৭/২৮ এপ্রিল আমরা মাত্র একটি প্লাটুন ইপিআর ছিলাম শেওলাতে। আনসার ৪/৫ জন ছিল। পাকসেনারা আবার আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে শুনে আমরা টিকতে পারব না ভেবে বড়গ্রাম বিওপিতে চলে গেলাম। মেজর দত্ত ও ক্যাপ্টেন রব আমাদের ঐ ক্যাম্পে যান। আমাদের হেডকোয়ার্টার করলেন বাংলাদেশ চেকপোস্ট সুতারকান্দি চেকপোস্টে। আমরা তখন ৫০ জনের মত ইপিআর হলাম। আমরা ডিফেন্স নিলাম বড়গ্রাম, মনিরং, কোনাগ্রাম এবং সুতারকান্দি চেকপোস্টে। পাক বাহিনী ইতিমধ্যে শেওলা দখল করে নেয়।

 মে মাসের প্রথম থেকে ক্যাপ্টেন রব থাকতেন সুতারকান্দি চেকপোস্টে। ক্যাপ্টেন রব আমাদের নির্দেশ দিলে ‘হিট এণ্ড রান’ পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতে। আমরা হঠাৎ করে পাক আর্মির উপর আক্রমণ করে আবার ঘাঁটিতে ফিরে আসি। মে মাসের ২৩ তারিখে সব অবস্থান থেকে কিছু কিছু করে ইপিআর নিয়ে একটি প্লাটুন তৈরী করে হাবিলদার শামসুল হকের নেতৃত্বে লাতু নামক স্থানে যাই পাকসেনাদের আক্রমণ করতে। ঐ তারিখ রাতে আমরা পাক ঘাঁটির উপর ৩" মর্টার দিয়ে আক্রমণ করি। কিছু লোক ওখানে থাকে সকালে পর্যন্ত আক্রমণের ফলাফল দেখবার জন্য। আমরা ১৪ জনের মত রাতেই ফিরে আসি।

 ২৪শে মে ভোরে কয়েকশত পাকসেনা পুরা ভারী অস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে এগোতে থাকে। আমরা প্রথমে দেখতে পাইনি। আমাদের বড়গ্রাম, মন্দিরপোর্ট, কোনাগ্রাম পিছে ফেলে আমাদের চেকপোস্টে হামলা চালায়। আমরা তখন তিনটি ঘাঁটি থেকে একই সময় রাস্তার উপর দিয়ে অগ্রসরমান পাকসেনাদের আঘাত হানতে থাকি। চারিদিকের আক্রমণে বহু পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা পিছু হটে ফায়ার স্টপ করে। আমরা গুলির শব্দ না পেয়ে তিন পার্টিই রাস্তার উপর উঠে পড়ি, এমন সময় পিছন দিক থেকে আবার গুলির শব্দ পেলাম। পিছে গিয়ে দেখলাম, সমগ্র বড়গ্রাম ৩০০ মত পাকসেনা ঘিরে ফেলেছে, অপর দিকে কোনাগ্রামও ঘিরতে চেষ্টা করছে পাকসেনাদের অপর দল। আমাদের তখন একটাই পথ খোলা ছিল। আমাদের তখন গোলাবারুদ প্রায় শেষ, অস্ত্রও অনেক অকেজো। আমরা পিছু হটে পালাতে চেষ্টা করি। পাকসেনারা আমাদের পিছু ধাওয়া করে। এই সময় বেসামরিক বেশ কিছু লোক পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয়। আমরা ৯ জন রাস্তা ধরে ভারতের অর্ধ মাইল ভিতরে চলে যাই। পাকসেনা তখনও গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসছিল। আমাদের আর পিছু হটার ক্ষমতা ছিল না। ৭/৮ জন পাকসেনা গুলি করতে করতে ভারতে ঢুকে পড়ে। আমরা ভরতের ঐ স্থানে ৫টি এল-এম-জি পড়ে থাকতে দেখি একবারে প্রস্তুত অবস্থায়। আমরা তখনই ৫টি এলএমজি নিয়ে পজিশন নিই। আমাদের কাছাকাছি আসলে আমরা গুলি চালাই। একজন সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায়। বাকিরা সব পিছু পালাতে থাকে। আমরা পাকবাহিনীর পিছু ধাওয়া করি। যে পাক সেনাটি পড়ে যায় তাকে আহত অবস্থায় বন্দী করি। সে ছিল ৩১ পাঞ্জাবের হাবিলদার দোস্ত মোহাম্মদ। এই সময় ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর একজন কর্নেল এসে বন্দীসহ আমাদেরকে ভারতের ফকিরাবাজার নিয়ে যান। এরপর পাকসেনারা এই এলাকা দখল করে নেয়। আমরা সবাই ভারতে আশ্রয় নিই। আমি ৪নং সেক্টরে কর্নেল সি, আর, দত্তের নেতৃত্বে যুদ্ধ করি। আমার কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন রব।