পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৩৪

সশস্ত্র প্রতিরোধ; কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা

শিরোনাম সূত্র তারিখ
কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র ……… ১৯৭১

চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল এম, এ, ওসমান চৌধুরী[১]

৩১-১-১৯৭৪

 আমি ইপিআর, ৪র্থ উইং-এর ভার গ্রহণ করার পূর্ব থেকেই ওখানে (চুয়াডাঙ্গায়) ছিলেন দুইজন ক্যাপ্টেন-সহকারী উইং কমাণ্ডার হিসাবে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বাঙ্গালী। নাম তার ক্যাপ্টেন এ, আর, আজম চৌধুরী (বর্তমানে মেজর), দ্বিতীয় জন ছিলেন অবাঙ্গালী, তার নাম ক্যাপ্টেন (মরহুম) সাদেক।

 এই উইং-এর অধীনে ছিল ৫টি কোম্পানী। ১টি কোম্পানী চুয়াডাঙ্গা হেডকোয়ার্টারে, অন্য চারটি ছিল সীমান্ত এলাকায়। উইং-এর সীমান্ত এলাকা ছিল দক্ষিণে মাসলিয়া বিওপি থেকে উত্তরে মহেশকুণ্ডি বিওপি পর্যন্ত। প্রত্যেকটি কোম্পানীর কমাণ্ডার ছিল একেকজন সুবেদার। মোট সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫০। তার মধ্যে আনুমানিক অবাঙ্গালী সেনার সংখ্যা ছিল ১৫০।

 ২০শে মার্চ ১৯৭১ সন। চট্টগ্রাম থেকে আমার ব্যক্তিগত গাড়ীটি সড়ক পথে চুয়াডাঙ্গা এসে পৌঁছল। ২৪শে মার্চ সকাল ১০টায় ঐ গাড়ী করেই আমার স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে মেহেরপুরের পথে কুষ্টিয়া রওনা হই। আমার পরণে ছিল ইপিআর পোশাক। সাথে চলল ইপিআর জীপে চজে ৪ জন সশস্ত্র ইপিআর সৈনিক। উদ্দেশ্য ছিল, আমার সরকারী বাড়ী মেরামত করার খরচ হিসাবে কুষ্টিয়ার ডিসি’র কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা। ইচ্ছা ছিল, ঐ দিনই কাজ সেরে কুষ্টিয়ায় রাত্রি যাপন করার পর ২৫শে মার্চের পূর্বাহ্নেই চুয়াডাঙ্গা ফেরত আসার। কিন্তু মেহেরপুরে গিয়েই গাড়ীটা আমার নষ্ট হয়ে গেল। কিছুতেই দোষ খুঁজে পেলাম না। জীপ ফেরত পাঠিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে মেকানিকস আনালাম। গাড়ী ঠিক হতে হতে বিকেল ৩টা বেজে গেল। আবার রওনা হলাম কুষ্টিয়া অভিমুখে। আরো ১৫ মাইল যাবার পর গাড়ী খারাপ হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে আশে-পাশের বাড়ী থেকে পাটের রশি সংগ্রহ করে জীপের পেছনে গাড়ীকে বেঁধে কুষ্টিয়া পৌঁছলাম। উঠলাম কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে।

 পরদিন ২৫শে মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় ডেপুটি কমিশনার সাহেবের অফিসে গেলাম। ডেপুটি কমিশনার ছিলেন জনাব শামসুল হক। তাঁর অফিস ও বাসস্থান ছিল একই প্রাঙ্গণে। তিনি আসলেন, কথাবার্তা হল, চায়ের পর্ব শেষ হল। তারপর পিয়নের মারফত ডাকলেন ল্যাণ্ড এ্যাকুইজিসন অফিসারকে। এল-এ-সাহেব আসলেন, সব শুনলেন, তারপর গেলেন অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চেকবুক আনবার জন্য। অসহযোগ আন্দোলনের প্রতিবন্ধকতা সেরে আমাকে চেক ইস্যু করতে করতে বেলা দেড়টা বেজে গেল। তখনকার ন্যশনাল ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেল, তাই টাকা আর উঠানো গেল না। চুয়াডাঙ্গায় এমন কোন জরুরী অবস্থা ছিল না তাই টাকা সাথে করে নিয়ে যাবো মনে করেই ২৫শে মার্চ রাতেও কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে রয়ে গেলাম।

 ২৬শে মার্চ ভোর ছটায় ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখতে পেলাম অল্প দূরেই রাস্তার উপর মিলিটারী জীপে করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর লোক টহল দিচ্ছে আর জানিয়ে দিচ্ছে ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ। কুষ্টিয়ার


  1. ১৯৭১ সালে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন।