পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৪৩

অনেকে প্রাণ দিল, অনেকে আত্মগোপন করে রইল। যারা আত্মগোপন করে রইল তাদের সামান্য সংখ্যকের কাছে রাইফেল ও স্টেনগান ছিল।

 তৎকালীন ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল যশোরে। বেশীর ভাগই বাঙ্গালী। ক্যাপ্টেন হাশমত (পদাতিক বাহিনী) ও ক্যাপ্টেন আওলাদ হোসেন (সিগন্যালস) এই দু'জন ছিলেন বাঙ্গালী অফিসার। ২৬শে মার্চ আমি ক্যাপ্টেন হাশমতের কাছে আমাদের বিদ্রোহ করার খবর জানিয়ে তাদেরকেও জরুরী অবস্থা গ্রহণ করতে অয়ারলেসে খবর পাঠাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমার সেখানকার বাঙ্গালী সুবেদার ও জওয়ানদের দৃঢ় মনোবল সত্ত্বেও এই দুজন অফিসার আত্মগোপন করে। পরবর্তী এক সপ্তাহকাল পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র সৈন্যদল নায়েব সুবেদার আবদুল মালেকের নেতৃত্বে সীমিত কিন্তু প্রচণ্ডভাবে লড়াই শেষে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারা বেনাপোলের দিকে পালিয়ে যায়। সেখানেও তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নাভারন থেকে দূরে রাখতে সমর্থ হয়। তৎকালীন লেঃ হাফিজের মুখে শুনেছি, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল মেঘ সিং তাঁর এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে লেঃ হাফিজ ও ইপিআর বাহিনীর সাহায্যার্থে বাংলাদেশের মাটিতে ঢুকে পরেন এবং নাভারনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত লেঃ কর্নেল মেঘ সিং-এর ২/৩ জন সৈন্য পাক-বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, যার পরিণামে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে ভারত তাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রত্যক্ষভাবে বাংলার মাটিতে ঢুকে যুদ্ধে লিপ্ত হবার কাহিনী অস্বীকার করে। লেঃ কর্নেল মেঘ সিং তার সৈন্যদের নিয়ে নিজের মাটিতে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

 অপরিহার্য কারণবশত বেনাপোল-যশোর রোডসহ দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি এবং প্রত্যক্ষভাবে আমার নিয়ন্ত্রণে আসেনি এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত।

 এদিকে মেহেরপুরের তদানীন্তন এসডিও জনাব তৌফিক এলাহি চৌধুরী ও ঝিনাইদহের তদানীন্তন এসডিপিও জনাব মাহবুবউদ্দিন আহমদ আমার সাথে যোগদান করেন। মাহবুব উদ্দিন সাহেব পুলিশ অফিসার হওয়া বিধায় আমি তখনই তাঁকে ঝিনাইদহ রক্ষণাবেক্ষণের ভার ও ঝিনাইদহে প্রেরিত সকল সৈন্যের নেতৃত্ব প্রদান করি। কুষ্টিয়া যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মাহবুল সাহেব সুনিপুণভাবেই ঝিনাইদহে তাঁর কর্তব্য পালন করেন। এপ্রিল মাসের ২/৩ তারিখে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের প্রফেসর সফিকউল্লাহ সাহেবও আমার সাথে যোগদান করেন। এদের আমি অশেষ দেশপ্রেম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কঠিন সংকল্প দেখতে পেলাম। আগেই বলেঠি আমার কাছে ক্যাপ্টেন আজম ছাড়া দ্বিতীয় কোন অফিসার ছিল না। তাই ৭ই এপ্রিল সেক্টর অর্ডার-এর মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করার জন্য আমি তাদেরকে সরাসরি ক্যাপ্টেন র‍্যাঙ্কে কমিশন দিয়ে তাদেরকে র‍্যাঙ্ক পরিয়ে দিই। সেক্টর অর্ডারে আমি লিখেছিলাম- “On behalf of the Bangladesh High Command I hereby award Commission to the following persons directly in the rank of Captain to meet operational requirements:—

 (a) Mr. Toufiq Elahi Chowdhury.

 (b) Mr. Mahbubuddin Ahmed.

 (c) Mr. Md. Safiqullah.

 এই তিনজন অফিসারই পরবর্তীকালে যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত সেক্টরে কোম্পানী কমাণ্ডার হিসাবে যুদ্ধ করেছেন। তাদের বীরত্ব ছিল সত্যিই অতুলনীয়।

 কুষ্টিয়া যুদ্ধের পর ২রা এপ্রিল প্রথম বঙ্গ শার্দুলদের দুঃখময় পরিণামের খবর আমার গোচর করা হয়। আরও বলা হয় যে তাদের কিছুসংখ্যক লোক পালিয়ে চৌগাছায় একত্রিত হয়েছে এবং লেঃ হাফিজ নামে একজন