পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২৬৩

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ যশোর

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৮। যশোর-নড়াইল-গোপালগঞ্জের সশস্ত্র প্রতিরোধের বিবরণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র …………………১৯৭১

যশোর-গোপালগঞ্জের প্রতিরোধ যুদ্ধ

সাক্ষাৎকার: মেজর আবদুল হালিম

২২-১১-১৯৭৩

 অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমি আমার নিজ বাড়ী ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জে ছুটি ভোগ করছিলাম। ২৫শে মার্চের পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সিন্ধান্ত নিই। প্রথমে গোপালগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগ অফিসের নেতৃবৃন্দের সহিত মুক্তিযুদ্ধ কি ভাবে পরিচালনা করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করি। সাথে সাথে ছুটি ভোগকারী সৈনিক ও ইপিআরদিগকে গ্রাম-গঞ্জ ও শহর থেকে একত্রিত করি। সেই সময় গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ ফরিদ আহমদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সর্ব প্রকারে সাহায্য করেন।

 ২৮শে মার্চ গোপালগঞ্জ থানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে তৎকালীন কালিয়া থানার এম-পি-এ সাহেবের সহযোগিতায় যশোর জেলার নড়াইল মহকুমা শহরে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পৌঁছি। সেই সময় নড়াইলের এস-ডি-ও কামাল সিদ্দিকী ও যশোর জেলার এ্যাসিসট্যাণ্ট কমিশনার শাহাদৎ হোসেন সর্বপ্রকার সাহায্য করেন।

 ২৯শে মার্চ নড়াইল গিয়ে জানতে পারলাম, যশোরে পাকবাহিনীর সহিত মুক্তিবাহিনীর ভীষণ যুদ্ধ চলছে। তাই, নড়াইল থেকে যশোর অভিমুখে রওনা হই। পরে হামিদপুরে এক প্লাটুন পাকসেনা ডিফেন্স নিয়ে ছিল। আমার প্লাটুন ও সেই এলাকার ছাত্র, পুলিশ ও কিছু বেঙ্গল রেজিমেণ্টের জোয়ানসহ ঐদিনই রাত্রি সারে তিনটায় তাদের ডিফেন্সের চারদিক থেকে আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে তারা ভয় পেয়ে পেছনের দিকে পালিয়ে যায়।

 ৩০শে মার্চ সকালে আমার প্লাটুন ও হামিদপুর এলাকার অসংখ্য ছাত্র-যুবকসহ যশোর রওনা হই। সকাল ৯টার দিকে যশোর শহরে পৌঁছি। সেই সময় যশোর শহর আমাদের বাহিনীর আয়ত্তে ছিল যশোর শহরে ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে ক্যাপ্টেন হাসমত ও ক্যাপ্টেন আওলাদের সাথে দেখা করি এবং আমি ও আমার প্লাটুনের জোয়ানদেরকে কি করতে হবে তা অবগত করি।

 সেই সময় ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে জানতে পারলাম যশোর-কলিকাতা রোডের শঙ্করপুর নামক স্থানে পাকবাহিনীর সহিত ইপিআর বাহিনীর ভীষণ যুদ্ধ চলছে। রাত্রে অয়ারলেসে যুদ্ধের অগ্রগতির সম্বন্ধে যোগাযোগ করি।

 ৩১শে মার্চ সকালে শঙ্করপুরে চলে যাই। সেখানে ইপিআর বাহিনীকে পুনরায় নতুনভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডিফেন্স করে দিই। সেখানে ইপিআর বাহিনীর সুবেদার মালেক অসীম সাহসের সহিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। এইদিকে ক্যাপ্টেন আওলাদ ও ক্যাপ্টেন হাসমতকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। এবং স্বাধীনতা আন্দোলনেও তাদেরকে সক্রিয় অংশ নিতে দেখা গেল না।