পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

বসানো হয়; (২) আমি আমার কোম্পানী নিয়ে ঘোড়াঘাট-চরখাই রোডে ডিফেন্স নিই; (৩) লেঃ মোখলেসের কোম্পানীকে ডেপথ কোম্পানী হিসাবে রাখা হয়।


 ১৩ই এপ্রিল সংবাদ পাওয়া গেল পাকবাহিনী বগুড়া দখল করে নিয়েছে। তাই পাকবাহিনী বগুড়া জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি রোড হয়ে হিলি দখল করে নিতে পারে ভেবে ১৪ই এপ্রিল আমি আমার কোম্পানী নিয়ে পাঁচবিবি-হিলি রোডে ডিফেন্স নিই। অপর ২ কোম্পানী চরখাইতেই ডিফেন্স নিয়ে থাকে।


 ১৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী পাঁচবিবির দিক থেকে হিলি আক্রমণ করে। সেই দিন পাকবাহিনীর সাথে আমাদের চার ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য নিহত হয় ও আমাদের তীব্র আক্রমণের মুখে তারা পিছন হটতে বাধ্য হয়। সেই দিন চরখাই থেকে ২ কোম্পানীকে হিলি চলে আসার নির্দেশ দিই। সেই সময় ক্যাপ্টেন আশরাফ ও লেঃ মোখলেস তাদের জোয়ানদের ফেলে চলে যায়।


 ২০শে এপ্রিল সুবেদার হাফিজ, নায়েক সুবেদার করম আলী, নায়েক সুবেদার শহীদুল্লাহ দুই কোম্পানীসহ হিলিতে আমার নিকট পৌঁছে। সেই দিন খুব ভোরে পাকবাহিনী আমাদের উপর আক্রমণ করে। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পাকবাহিনীর সাথে আমাদের তীব্র যুদ্ধ চলে। অবশেষে পাকবাহিনী পিছন হটতে বাধ্য হয়। এদিকে পাকবাহিনীর মর্টার ও শেলিং-এ ভারতীয় সীমান্তের কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়। ফলে, ভারতীয় বি-এস-এফ কর্নেল মুখার্জী, পশ্চিম দিনাজপুরের ডি-এম ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে ২০ তারিখ গভীর রাতে আমাদের ডিফেন্স ভেঙ্গে দিয়ে হিলি থেকে ১৩ মাইল দূরে ভারতের কামালপাড়া নামক স্থানে কুরমাইল বেসিক ট্রেনিং ইনষ্টিটিউটে ২৫০ জনের মত জে, সি, ও, ও জোয়ান আশ্রয় নিই। এই যুদ্ধে ৬ জন জোয়ান শাহদাৎ বরণ করে। সীমান্ত অতিক্রম করার পূর্বে চরখাই ও হিলি সরকারী গুদাম থেকে ৪শত বস্তা চাউল নিয়ে যাই। ২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী হিলি দখল করে নেয়।


 ভারতে অবস্থানকালে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে কামারপাড়া, সোবরা এবং আঙ্গিনাবাদে তিনটি অপারেশন ক্যাম্প স্থাপন করি। সুবেদার রহাফিজকে আঙ্গিনাবাদ ক্যাম্প কমাণ্ডার, সুবেদার আলী নেওয়াজকে কামারপাড়া ক্যাম্প ও জয়পুরহাট চিনি মিলের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে সোবরার ক্যাম্প কমাণ্ডার হিসাবে নিযুক্ত করে আমি উক্ত তিনটি শিবির পরিচালনা করি।


 সেই সময় বাংলাদেশের কমাণ্ডার-ইন-চীপ কর্নেল এম, এ, জি. ওসমানী বালুরঘাট আসেন এবং আমাকে হিলি সেক্টর কমাণ্ডার হিসাবে নিযুক্ত করেন। ১৩ই মে পর্যন্ত আমি হিলি সেক্টর কমাণ্ডারের দায়িত্ব পালন করি। আমি সেক্টর কমাণ্ডার থাকাকালে আরো তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করি- মালন ক্যাম্প, তরঙ্গপুর ক্যাম্প ও তপন ক্যাম্প। মেজর নাজমুল হক আমার নিকট থেকে দায়িত্বভার বুঝে নেন এবং তৎকালীন মেজর বর্তমান কর্নেল শাফায়েৎ জামিল ৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। আমি আঙ্গিনাবাদ ক্যাম্প কমাণ্ডার হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করি।


 এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত গেরিলা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় ও পাকবাহিনীর চলাচলের পথে এ্যাম্বুশ করে পাকবাহিনীকে নাজেহাল ও তাদের ক্ষতি সাধন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন অপারেশন করে পাকবাহিনীকে সেখান থেকে প্রতিহত করে ২ ট্রাক ঔষধ, ৬০ বস্তা চিনি ও কিছু কাপড় নিয়ে আসা হয়।

  ২৯শে মে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এক কোম্পানী বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ও ইপিআর-এর জোয়ান নিয়ে হরতকিডাঙ্গা নামক স্থানে পাকবাহিনীর গতিপথের উপর এ্যাম্বুশ করি। সেই সময় পাকবাহিনীর এক কনভয় উক্ত পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের অতর্কিত আক্রমণে পাকবাহিনীর একজন অফিসারসহ আনুমানিক ৩০ জন নিহত হয় ও একখানা জীপ ধ্বংস হয়। আমাদের পক্ষে ইপিআর-এর জলিল শাহাদাৎ বরণ করে। সেখানে একটি পিআরসি-১০ আয়ারলেস সেট ও একটি এস-এম-জি উদ্ধার করি।