পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০০

 ২৭শে মার্চ দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকায় সমস্ত বিওপিতে সংবাদ পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে যত পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআর ছিল সবাইকে হত্যা করা হয়।

 এপ্রিল মাসে দিনাজপুর টাউন শত্রুমুক্ত হবার পর পুলিশকে দিনাজপুর শহর হস্তান্তর করে আমাদের কিছু লোক পার্বতীপুরের দিকে এবং কিছু লোক সৈয়দপুরের দিকে রওয়ানা হয়ে যায়।

 এপ্রিল মাসের ১২/১৩ তারিখে সৈয়দপুরের ছুি দূরে পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পশ্চাদপসরণ করি।

 পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৫ এপ্রিল তারিখে দিনাজপুর শহর পুনরায় দখল করে নেয়।

দিনাজপুর জেলায় সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আরব আলী

......১৯৭২

 ২৫শে মার্চের পাকবাহিনীর পৈশাচিক ঘটনার কথা আমরা ২৬শে মার্চ সকাল বেলা জানতে পারি এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এই দিন থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনসাধারণ খানসেনা আসার সম্ভাব্য সকল রাস্তায় বেরিকেড রচনা করে। এই সময় জনসাধারণ ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং জনসাধারণের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে দেখা যায়। চারিদিকে একটা মার- মার, কাট- কাট অবস্থার সৃষ্টি হয়।

 ২৭শে মার্চ পাঞ্জাবী বাহিনী দিনাজপুর কুটিবাড়ী ইপিআর হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করে এবং সমস্ত ইপিআরকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে। এই সময় ইপিআররা পাঞ্জাবীদের প্রতি পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষ মর্টার ও কামান মারতে থাকে। আমরা বর্ডার থেকে মুহুর্মুহু কামানের গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম। এই সময় দেখতে পাই হাজর হাজার নিরীহ শহরবাসী ভারতের দিকে রওনা দিচ্ছে। এই সময় আমি আমার উপরস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে পাক পাক হিলি বর্ডারে যোগাযোগ করি।

 ২৯শে মার্চ ভোরে ভাইগর বিওপিতে অবস্থানরত একজন পাঞ্জাবী ইপিআর হাবিলদার ও একজন নায়েককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই দুইজনকে খতম করে আমি রুধরাণী বিওপিতে চলে যাই। সেখানে অবস্থানরত একজন পাঞ্জাবী হাবিলদার ও একজন সিপাইকে জিন্দা বন্দী করি। এরপর আমি রাণীনগর প্লাটুন হেডকোয়ার্টারে চলে আসি। এখানে একজন পাঞ্জাবী ল্যান্স নায়েককে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং একজন সিপাইকে জিন্দা বন্দী করে তাকে পাবলিকের হাতে তুলে দিই। পরে জনসাধারণ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

 ফুলবাড়ী সংঘর্ষে ঃ ২৯শে মার্চ উপরোক্ত ঘটনার পর আমি আমার সমস্ত জওয়ানদেরকে একত্রিত করি। ফুলবাড়ি আসার দুই মাইল দূরে থাকতে খবর পাই যে পাঞ্জাবী সৈন্যরা দিনাজপুর থেকে ইপিআর- এর হাতে মার খেয়ে পার্বতীপুর যাবার জন্য ফুলবাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই কথা শোনার পরপরই ভীষণ গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পাই। খবর নিয়ে জানতে পারি যে ফুলবাড়ী থেকে ইপিআররা পাকবাহিনীর গতিরোধ করেছে। এই খবর পাবার পর খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার জওয়ানদেরকে নিয়ে ফুলবাড়ী যাবার পথে হাসপাতালের কাছে রোড ব্লক করলাম। আমরা পজিশন নেবার পরপরই পাঞ্জাবীরা অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটতে আরম্ভ করে এবং কিছু সৈন্য গাড়ী ফেলে কোনাকুনি মাঠের মধ্য দিয়ে পার্বতীপুরের দিকে অগ্রসর হয়। আমরা তাদের পিছু নেই এবং আক্রমণ চালাই। এই যুদ্ধে ফুলবাড়ী বাজারের মোড়ে ৭ জন খান সেনার লাশ পাওয়া যায়। একজন