পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩১

 ৩০শে মার্চ ক্যাপ্টেন গিয়াস; হাবিলদার আলী আকবর (বর্তমানে নায়েক সুবেদার); এবং আমি বগুড়া অভিমুখে রওনা হই। বগুড়ার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারকে নওগাঁতে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতে অনুরোধ করি। এরপর আমরা বগুড়া পুলিশ লাইনে যাই। হাবিলদার আলী আকবরকে পুলিশ লাইনে রাখা হয় ও তার সাথে ২৫ জন ইপিআর দেওয়া হয়। হাবিলদার আলী আকবরকে পুরোপুরি কমাণ্ড দেয়া হয়। আমি ক্যাপ্টেন গিয়াসসহ নওগাঁতে ফিরে আসি।

 ৩০শে মার্চ আমি এক প্লাটুনসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌছাই। হাবিলদার আলী আকবর ২৫জন ইপিআর; কিছু পুলিশ; ছাত্রসহ মুজিবর রহমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপর আক্রমন চালায়। মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ওদের ক্যাম্প ছিল। এক রেজিমেণ্ট ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ওরা সজ্জিত ছিল। রাত চার ঘটিকার সময় পশ্চিম পাকিস্তানিদের সৈন্যরা পার্শ্ববর্তী অয়ারলেস স্টেশনে ও এতিমখানার পার্শে পেট্রল ডাম্পে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে তারা ৩০/৩২ টা গাড়ী নিয়ে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।

 ১লা এপ্রিল বেলা ৯টার সময় হাবিলদার আলী আকবর আড়িয়াল বাজারে এ্যামুনিশন ডিপোর উপর আক্রমণ চালায় এবং ক্যাপ্টেন নূর আহম্মদসহ ২৩ জন পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের পরিবারবর্গকে জীবিত অবস্থায় ধরে ফেলে। তাদের পরিবারবর্গকে সে নিজের হেফাজতে রেখে হাজতে নিয়ে আসে। এই আক্রমন তিনজন পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। ঐখানে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টের একজন নায়েক সুবেদার আবুল কাশেমসহ এক প্লাটুন বাঙ্গালী সৈন্য ছিল। তাদেরকে পরে ডেকে আনা হয়।

 ঐ অ্যামুনিশন ডিপোতে ৯২ কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র ছিল। ৮০ ট্রাক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ বগুড়াতে নিয়ে আসা হয়। এবং পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। মেজর নজমুল হক উক্ত সংবাদ পেয়ে বগুড়াতে আসেন এবং হাবিলদার আলী আকবরকে এই দুঃসাহসিক অভিযানের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি আমাকে বলেন যে এত অল্প লোক নিয়ে এত বড় একটা আক্রমন চালানো কখনো সম্ভব ছিল না।

 বগুড়া জেলা স্কুলে আমরা ক্যাম্প স্থাপন করি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। হাবিলদার আলী আকবর ছেলেদেরকে দিবারাত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ইতিমধ্যে সকল এমসিএ; ডিসে এবং সংগ্রাম পরিষদের কর্মীগণ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের থাকা খাওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত করার জন্য এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে ছিলেন পুলিশের আর- আই হাতেম আলী; তার অধঃস্তন কর্মচারীবৃন্দ; এমসিএ ডাক্তার জাহিদুর রহমান; ডাক্তার গোলাম সরওয়ার; এডভোকেট গাজিউল হক; এমসিএ মুজিবর রহমান আক্কেলপুরী প্রমুখ। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক দলের কর্মীগণ এ কাজে সহযোগিতা করেন।

 ইতিমধ্যে মেজর নজমুল হক কিছু লোক বাঘাবাড়ি ঘাটে পাঠাবার নির্দেশ দেন। কিছু লোক সিরাজগঞ্জে এবং কিছু লোক মহাস্থানে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে শুনতে পেলাম দিনাজপুরের ঘোরাঘাট থেকে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ক্যাপ্টেন আনোয়ার; ক্যাপ্টেন শওকতের চিঠি এবং একজন এমসিএসহ হাবিলদার ও দুইজন নায়েক একটা জীপে এ্যামুনিশন নেয়ার জন্য বগুড়াতে এসেছেন। এমসিএগণের পরামর্শ ও মেজর নজমুল হকের আদেশক্রমে তাদেরকে ট্রাক ও জীপে আর্মস ও গোলাবারুদ দেয়া হয়। পরে সুবেদার প্রধান পুনরায় অস্ত্র নিতে আসে। ৮ ট্রাক অস্ত্র ও দুটি ৩ ইঞ্চি মর্টার তাদেরকে দেয়া হয়।

 হাবিলদার আলী আকবরকে মহাস্থানে পাঠানো হয়। পরের দিন তাকে আবার ডেকে পাঠানো হয়। আলী আকবরকে হেডকোয়ার্টারে (বগুড়া) রেখে আমি বাঘাবাড়ি ঘাটে ডিফেন্সে যাই। এবং সিরাজগঞ্জের এসডিও জনাব সামসুদ্দিন; শাহজাদপুরের এমসিএ আব্দুর রহমান; শাহজাদপুরের প্রিন্সিপাল তাসাদ্দক হোসেন এবং আরো অন্যদের সহিত আমার নিজজ্ঞানে পরামর্শ করে আলী আকবরকে আনার জন্য বগুড়া পাঠাই। দুদিন পর আলী আকবর বগুড়া হতে এসে আমার সাথে বেড়াতে যোগদান করে। পাইকড়াহাটে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরী করা