পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৩২

 হয়। পরের দিন তাকে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য সাথিয়া থানায় (পাবনা) পাঠাই। ইতিমধ্যে পাকবাহিনী নগরবাড়ী থেকে (১০ ই এপ্রিল) পাবনা অভিমুখে যাত্রা করে। পরদিন আলী আকবর ফেরত এসে বলল যে গতকাল (১৩ এপ্রিল) পাক সেনাবাহিনী পাবনায় প্রবেশ করেছে এবং লোকমুখে জানা গেছে তাদের এক ডিভিশন সৈন্য এ্যাডভান্স করছে। ১৩ ই এপ্রিল পাবানার ডিসি; এসপি নদী পার হয়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেছেন। পাবনা পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র ও এ্যামুনিশন আর আইয়ের নিকট থেকে টিপু বিশ্বাস নিয়ে গেছে। তখন আলী আকবর কে পুনরায় নাকালীয়া বাজারে পাঠাই। নাকালীয়াতে চেয়ারম্যান (নক্সালপন্থী) তাকে সেখানে থাকতে বাধা দেয় এবং এখানে থাকতে দেব না বলে হুমকি দেয়। পরদিন সকালে এসে আলী আকবর আমাকে এসব জানায়। ঐ এলাকায় জামাতে ইসলামী ও মুসলিম লীগপন্থী কিছু লোক আমাদের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতো।

 আমি আলী আকবরের সাথে পরামর্শ করি কিভাবে আক্রমন পরিচালনা করা যায়। তারিখ ছিল ১৪ই এপ্রিল। আলী আকবরকে নির্দেশ দিই বগুড়াতে গিয়ে মেজর নজমুল হকের সাথে পরামর্শ করে ফেরত আসতে। ১৭ এপ্রিল আলী আকবর ফেরত আসে। এক প্লাটুন সৈন্যসহ তাকে নগরবাড়ী এবং পাবনা রাস্তার মধ্যে পাকসেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিই। আলী আকবর ১৭ই এপ্রিল রাত্রে সেখানে যায়।

 আমি জানতে পারলাম যে আমাদের যে; আমাদের সুবেদার মেজর আবদুল লতিফ মোল্লা ১৭ই এপ্রিল বাঘাবাড়ি ঘাটে এসেছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে যাই। ২০শে এপ্রিল আমি বাঘাবাড়ী ঘাটে পৌছাই এবং দেখতে পাই হাবিলদার আলি আকবর এক আহত সৈনিককে নিয়ে ঘাটে রেখেছে। আলী আকবর বলল যে; ১৯শে এপ্রিল পাইকড়হাটে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ পাকসেনা অগ্রসর হচ্ছিল। সেই সময় সে পাকসেনাদের উপর গুলী ছোড়ে। পাকসেনাদের ৬ গাড়ী নষ্ট হয়েছে এবং বহু সৈন্য হতাহত হয়েছে। তার পক্ষেও অনেক হতাহত হয়েছে এবং ছত্রভঙ্গ হয়েগেছে। আহত হাবিলদার আবদুল আলীকে নিয়ে আমরা শাহজাদপুর হাসপাতালে আসি। সেখানে তার উপর অস্ত্রোপচার করা হয় স্থানীয় ডাক্তারদের দ্ধারা। এরপর হাবিলদার আলী আকবর সিরাজগঞ্জের এসডিও-র সাথে যোগাযোগ করে। ছত্রভঙ্গদের আমি একত্রিত করার চেষ্টা করি কিন্তু তা করতে পারিনি।

 আমি তার পর ৩নং সেক্টরে যোগ দিই। সেখান থেকে আমাকে কোম্পানী কমাণ্ডার বানিয়ে সিলেটের আসালংবাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীর সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকার; হাবিলদার মোহাম্মদ ফসিউদ্দিন

০২-০৫-১৯৭৪

 চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইপিআর-এর ৬নং উইং ছিল। ২৪শে মার্চ থেকে আমাদের কিছু লোককে বাইরে অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ডিউটির জন্য পাঠানো হয়। এই উইং এর কমাণ্ডার; সহকারী উইং কমাণ্ডার; ক্যাপ্টেন সিদ্দিকও আর একজন ক্যাপ্টেন মেস কমাণ্ডার থেকে সুবেদার মেজর পর্যন্ত সবাই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী। বাঙ্গালীদের বদলী করে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিয়োগ করা হয়। ২৫শে মার্চ থেকে বাংগালী ইপিআদের কাছে থেকে অস্ত্র নেবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাঙ্গালীদের সন্দেহ জাগায় অস্ত্র জমা দিতে তারা অস্বীকার করে। জনসাধারণ আমাদের উপর হামলা চালাবে এই অজুহাতে আমরা অস্ত্র জমা দিই নাই।

 ২৫শে মার্চ বিকেলে সেক্টর হেডকোয়ার্টার রাজশাহী থেকে ১৫/১৬ জন বাঙ্গালী ইপিআর একজন সিকিউরিটিসহ নবাবগঞ্জে আসে। মাঝে মাঝে তারা গোপনে বৈঠক করতে থাকে। ২৫শে মার্চ রাতে তিনজন ক্যাপ্টেনসহ আনুমানিক ২৫/৩০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী ইপিআর রাত প্রায় দেড় ঘটিকায় সময় রহনপুর প্লাটুন