সশস্ত্র প্রতিরোধ: বগুড়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
---|---|---|
১২। বগুড়ায় সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ | ................................ | ........................ ১৯৭১ |
বগুড়ার ছাত্র জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধ[১]
বাংলাদেশের প্রতিরোধ সংগ্রামে বগুড়ার ছাত্রসমাজ সারা দেশের ছাত্রদের মুখ উজ্জ্বল করে তুলেছে। বগুড়ার ছাত্ররা এই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাদের ছাত্র পতাকাকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। যারা এই মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস রচনা করবেন তাদের এই সত্যটি অবশ্যই স্বীকৃত দিতে হবে। শুধু কলেজের ছাত্ররাই নয় দলে দলে স্কুলের ছাত্ররাও শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পথ নেমে এসেছে। যুদ্ধবিদ্যায় অশিক্ষিত এ কাঁচা বয়সের ছেলেরা একমাত্র দেশপ্রেমের বলে বলীয়ান হয়ে যুদ্ধবিদ্যায় অভিজ্ঞ পাক সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে অকৃতভোয়ে প্রাণ নিয়েছে; প্রাণ দিয়েছে।
দেশকে মুক্ত করতে হলে শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রামে নামতে হবে; ছাত্ররা এই সত্যটিকে ভাল করেই বুঝতে পেরেছিল। তাই মার্চের প্রথম থেকে তারা পাড়ায় পাড়ায় প্যারেড আর রাইফেল চালানোর ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছিল। ছোট ছোট ছেলেরাও এই ট্রেনিং- এ অংশ নিত। এই ট্রেনিং-এর মধ্য দিয়ে শুধু হাত নয়, হাতের চেয়েও বড় কথা, তাদের মনটাও সংগ্রামের জন্য দেরী হয়ে উঠছিল। এটা শুধু কথার কথা নয়, তারা কার্যক্ষেত্রে এই কথাটিকে সত্য বলে প্রমাণিত করেছে।
সারাটা মাস ধরে মিছিলের পর মিছিল চলেছিল। ছাত্রদের মিছিল; শ্রমিকদের মিছিল; চাকুরেদের মিছিল; সাধারণ মানুষের মিছিল-মিছিলের আর শেষ নেই। বগুড়ার আকাশ বাতাস মিছিলের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে দিয়ে এল ২৫শে মার্চ; সেই অবিস্মরণীয় ২৫শে মার্চ। অবশ্য বগুড়া শহরে এই দিনটিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি।
২৬শে মার্চ সন্ধ্যেবেলায় ছাত্রদের মিছিল পথে বেরোল; তারই পাশাপাশি লাল ঝাণ্ডাকে সামনে নিয়ে শ্রমিকদের মিছিল চলে এল। ছাত্র আর শ্রমিকদের শ্লোগানে শ্লোগানে বগুড়া শহরের রাজপথে আর অলি-গলি ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। আসন্ন ঝাড়ের আভাস পেয়ে তাদের মনে আশংকা-মিশ্রিত উত্তেজনা।
খবর এসেছে ইয়াহিয়ার সঙ্গে শেখ মুজিবের আলোচনা ভেঙ্গে গেছে। এবার এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে; সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ঘটনার গতি প্রবাহে এক ভীষন সংগ্রামে অনিবার্যভাবে ভেঙে পড়বে।
সেই দিন রাত দুটোর সময় খবর এসে পৌছাল; রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে একদল সৈন্য বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এর তাৎপর্য সুস্পষ্ট; ওরা ওদের হিংস্র থাবা বিস্তার করে আক্রমণের জন্য ছুটে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামকে অংকুরেই চূর্ন করে ফেলবার জন্য ওরা ওদের এই অভিযান শুরু করেছে।
খবরটা দেখতে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ল। ঘুমন্ত মানুষ শয্যা ছেড়ে উঠে বসল। ইতিমধ্যে পথে আওয়াজ উঠেছে- প্রতিরোধ চাই; প্রররোধ। ছাত্র আর শ্রমিকদের মিছিল বেরিয়ে গেছে। তারা সারা শহরের
- ↑ ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ” থেকে সংকলিত