পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৫৭

সশস্ত্র প্রতিরোধঃ বরিশাল-খুলনা-ফরিদপুর

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৪। বরিশাল-খুলনা-ফরিদপুর জেলায় সংঘটিত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র ১৯৭১

সশস্ত্র প্রতিরোধে বরিশাল

সাক্ষাৎকারঃ মেজর মেহেদী আলী ইমাম[১]

 অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আমি আমার বাড়ী মঠবাড়িয়ার দাউদখালীতে ছিলাম। অসহযোগ আন্দোলনের সমস্ত পরিস্থিতি আমি রেডিও থেকে শুনতাম। সব সময় আশংকার মধ্যে ছিলাম পাকসেনারা কখন আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে চলে এল ২৫শে মার্চের কালরাত্রি। রেডিও ও অন্যান্য খবর মারফত বুঝতে পারলাম ঢাকায় এবং অন্যান্য জায়গায় পাক মিলিটারীরা নিরীহ জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি এসব খবর শোনার পর ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় মঠবাড়িয়া থেকে লঞ্চযোগে বরিশালের পথে রওয়ানা হলাম।

 ২৭শে মার্চ সকাল ১০-১১টায় বরিশাল শহরে পৌঁছলাম। বরিশাল শহর তখন গরম। শহরের ছেলেরা রাইফেল, লাঠি, বল্লম এবং অন্যান্য অস্ত্রের সাহায্যে বরিশাল শহর পাহারা দিচ্ছিল। লোকের মুখে জানতে পারলাম একজন মেজর জলিল এখানে এসেছেন এবং স্থানীয় এম-সি-এ নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসায় কণ্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানেই মেজর জলিল আছেন। আমি এ খবর পেয়ে বেলা ১২টার সময় নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসায় গেলাম। সেখানে অত্যন্ত ভীড়। ভীড় ঠেলে ভেতরে গেলাম। সেখানে মঞ্জুর ভাই, মেজর জলিল, স্থানীয় এম-সি-এ আমু ভাই, শামসু মিয়া, মহিউদ্দিন ভাই, বারেক (এঁরা সবাই এম-সি-এ ছিলেন) এবং আরো অনেক স্থানীয় ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন। সবাই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং এ পরিস্থিতিতে কি করা যায় তা ভাবছিলেন। আমি মেজর জলিল, মঞ্জুর ভাই এবং অন্যান্যের সাথে দেখা করলাম। মেজর জলিলের সঙ্গে আমার আগে আলাপ ছিল না। তিনি আমার সম্পর্কে প্রথমে খোঁজখবর নিলেন। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন থানা দখল করে নেবার জন্য।

 ২৭শে মার্চ রাতে আমরা প্রতিটি থানাতে অয়ারলেসের মাধ্যমে খবর পাঠালাম যেসব বাঙ্গালী সৈনিকরা ছুটিতে আছেন তাদের পাঠিয়ে দেবার জন্য এবং মুজাহিদ, আনসার, উৎসাহী যুবক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বরিশালে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিলাম এবং আসতে না পারলে সেখানেই ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে বলা হল। সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ট্রেনিং-এর জন্য দিতে বলা হল। প্রতিটি থানা আমাদের নির্দেশ জেনে নিয়ে কাজ শুরু করে দিল। আমরা মেজর জলিলের নির্দেশে জায়গায় জায়গায় যুবকদের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করলাম।

 ২৭মে মার্চের রাতে নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাড়ীতে সব আওয়ামী লীগ নেতা ও অন্যান্য দলের নেতাদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। মেজর জলিলকে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিনায়ক করে কাজ শুরু করে দিলাম। দক্ষিণাঞ্চলের এলাকা বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা নিয়ে গঠিত ছিল। এসপিদের নির্দেশ দেয়া হল সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হাতে দিয়ে দেবার জন্য। এস-পি’রা নির্দেশ মেনে নিয়ে সমস্ত অস্ত্র আমাদের হাতে তুলে দেন।

 সংগ্রাম পরিষদের বিভিন্ন গ্রুপ গঠন করা হয়। খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি গ্রুপ গঠন করা হয় যাদের কাজ ছিল সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য খাবার যোগাড় করে দেয়া। ট্রান্সপের্টগুলি আমাদের কাজের জন্য নিয়ন্ত্রণে


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত ছিলেন।