পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৬০

আমি বাগেরহাটে দরগার পাশে অবস্থান নিই। বাগেরহাটের এম-সি-এ আবদুর রহমান অনেক সময় আমাদের কোন নির্দেশ না নিয়ে অনেক কাজ করে ফেলতেন। আমি খবর পাই খুলনার এম-সি-এ শেখ আবদুল আজিজ সাহেব বাগেরহাটে এসেছেন। তার সাথে অনেক কষ্টে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন।

 একদিন খবর পাই একটা জাহাজে কিছু হাতিয়ার আছে যার কথা পাকসেনারাও জানেনা এবং জাহাজটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এ খবর আমাকে দেন মংলা পোর্টের একজন কাস্টম অফিসার। সে হাতিয়ার যোগাড় করার জন্য আমি দুটি স্পীডবোট নিয়ে সুন্দরবন হয়ে ঘুরে মংলা পোর্টে যাই। পোর্টে গিয়ে একটা স্পীডবোট পরিত্যক্ত জাহাজটির কাছে যায়। আমি অন্য স্পীডবোটটি থেকে শত্রুদের উপর নজর রাখি। আগের স্পীডবোটটি যখন কয়েক বাক্স মাল নামিয়েছে, হঠাৎ করে গানবোট থেকে পাকসেনারা গোলা ছুঁড়তে থাকে আমরা কোনরকমে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে আসি। পরে বাক্স খুলে দেখতে পাই, সেগুলি বন্দুকের গুলি বাগেরহাট থেকে আসার পথে দেখতে পাই চার নৌকা বোঝাই চাল চুরি হয়ে গেছে। আমরা তার অধিকাংশই উদ্ধার করে বাগেরহাটে নিয়ে আসি। গুলি নিয়ে স্পীডবোটে করে পালিয়ে আসার সময় বৈঠাঘাটা থানাতে আশ্রয় নিই। এখানে শুনতে পাই, পাকসেনারা নদীপথে গানবোটের সাহয্যে পাহারা দিচ্ছে। আমি এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করে বাগেরহাটে ফিরে আসি। একদিন রাতে দালাল রজব আলী ও তার সঙ্গীরা আমাদের বাগেরহাট দরগা অবস্থানে রাতের অন্ধকারে হামলা চালায়। আমরা হামলা প্রতিহত করি। রজব আলী ও তার দলবল রাতের অন্ধকারে আমাদের কাছে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন উপায়ে বাধার সৃষ্টি করত।

 নানারকম সুবিধা অচলাবস্থা ও সাময়িক হতাশার জন্য বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক হতাশার সৃষ্টি হয়। আমি তাদের মধ্যে হতাশার ভাব দূর করে মুক্তিবহিনীকে সংগঠিত করে তুলি। তারপর মেজর জলিল আমাকে পিরোজপুর ও বাগেরহাটের ভার দেয়া হয় এবং আমাকে বরিশালে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য সেখানে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। তারপর আমি বরিশালে এসে আগেকার তৈরী বাংকার এবং অন্যান্য স্থানে অবস্থান নিই এবং বরিশাল শহর ও অন্যান্য এলাকায় যাতে শত্রুরা প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য শক্তিশালী ব্যূহ তৈরী করতে থাকি। বরিশাল থেকে বেশ কিছুদূরে জুনাহারে কীর্তনখোলা নদীর দুই পারে বাংকার খুঁড়ে শত্রুর অগ্রগতি ঠেকানোর জন্য শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে থাকি। ঢাকা এবং ভোলা থেকে রাত্রে পাকসেনারা আসতে না পারে তার জন্য জুনাহারে অবস্থান নিই। পূর্বেই বলেছি বরিশাল হল নদীপ্রধান। স্থলপথে পাকসেনাদের বরিশাল আসা অসম্ভব ছিল। যেদিক দিয়েই শত্রুসেনারা বরিশালের দিকে আসুক না কেন তাদের নদীপথ হয়েই আসতে হবে। পটুয়াখালী তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। সেদিক দিয়ে পাকসেনাদের আসার কোন সম্ভাবনা ছিল না, খুলনা হয়ে এতদূর ঘুরে পাকসেনারা আসবে সেটাও সম্ভব নয়। তবুও বরিশাল থেকে কিছু দূরে আমরা বাংকার খুঁড়েছিলাম পাছে খুলনার দিক থেকে কোন আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। তবে অস্ত্রের অভাবে সেখানে কোন অবস্থান নেওয়া হয়নি। জুনাহারে কীর্তনখোলা নদীর দুই পারে অবস্থান নেওয়ার পর শত্রুরা যাতে অতি সহজে নদীপথে বড় স্টীমারে না আসতে পারে তার জন্য ২টা স্টীমার ব্যারিকেড করে নদীর মধ্যে আড়াআড়িভাবে রেখে দেয়া হয়। আমি জুনাহারে প্রথমে ৯০জনকে ৯০টি রাইফেল দিই। এর মধ্যে ৫০টি ৩০৩ রাইফেল ছিল, বাকি ৪০টি ছিল মান্ধাতা আমলের। মেজর জলিল ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মঞ্জুরকে অস্ত্রের জন্য ভারত থেকে ৫০টি এস-এম-জি, ২০০টা ৩০৩ রাইফেল, ১৫টি এস-এল-আর, ৩০০টা ৩৬-হ্যাণ্ড গ্রেনেড ও কিছু এনারগা গ্রেনেড ও লাঞ্চার নিয়ে আসেন। তবে এসব অস্ত্রের কোন শক্তি ছিল না পাকসেনদের গানবোট ধ্বংস করার। এসব অস্ত্র নূরুল ইসলাম মঞ্জুর মেজর জলিলের হাতে তুলে দেন। মেজর জলিল এসব অস্ত্রের মধ্যে আমাকে ২টা এস-এল-আর, ৪টা এনারগা গ্রেনেড ও ৩০টি মান্ধাতা আমলের রাইফেলের পরিবর্তে ৩০৩ রাইফেল ৩০টি দেন। ইতিপূর্বেই