পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৬৪

 খুলনা জেলার সুন্দরবন এলাকায় গাবুরিয়া ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনীর নিকটে তিনটি পাক গানবোট আমাদের আক্রমণ করে। আমরাও পাল্টা আক্রমণ করি। এক ঘণ্টা যাবৎ দু'পক্ষে গোলাগুলি হয়। আমাদের আক্রমণে একটি গানবোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন ওরা দূরে চলে গিয়ে কামান ছুড়তে থাকে। রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। আমাদের দু'টি লঞ্চে পিছনে যে পেট্রোল ছিল তাতে শেল পড়ে আগুন লেগে যায়। ওখানে আমাদের কয়েকজন যোদ্ধা শহীদ হয়। আমরা পানিতে ঝাঁপ দিই। আমরা কিছু সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠি। ওয়াপদা বাঁধে উঠে পজিশন নিই। কিছু মুক্তিযোদ্ধাসহ আমি এবং মঞ্জুর পিছু হঠতে থাকি। পাকসেনারা অনবরত শেল ফেলতে থাকে গ্রামের দিকে। আমরা যে কোন স্থানে তার কিছুই বুঝছিলাম না।

 গাবুরিয়া ইউনিয়নের ঐখানে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খবর দিয়ে পাক গানবোট নিয়ে আসে। তখন ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঠের ভিতর আমি নূরুল ইসলাম মঞ্জুরকে হারিয়ে ফেলি। আমি এবং আবুল হোসেন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছিন্নভাবে একদিকে এগোতে থাকি। ভোরবেলা সর্দার জালাল, কানু, মকসেদ আলী, বাদল, ফিরোজসহ কিছু লোককে মাঠের মধ্যে দেখতে পাই এবং তাদের সাথে মিলিত হই। আমরা ১৭ জন লোক। আর কারো কোন খোঁজ পাইনি। একদিকে বিদ্যুৎ, সার্চ লাইটের আলো, অন্যদিকে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ক্রলিং করে এগোচ্ছিলাম। আমরা ১৭ জনই কমবেশী আহত ছিলাম। আমরা ১৭ জন গ্রামের দিকে রওনা হচ্ছিলাম। বৃষ্টি তখন সমানে হচ্ছে। আমরা পাইকগাছা থানার ভিতরে মদিনাবাদ গ্রামে কয়রা ইউনিয়নে পৌঁছাই। আমরা আমাদের পরস্পরের নাম বদল করি। গ্রামের অবস্থাও বুঝি যে তা আমাদের পক্ষে হবেনা। মওলানা সালাম ওখানে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। মওলানা আবদুস সালাম তার দলবল এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘেরাও করে বন্দী করে ফেলে।

প্রতিরোধ-বরিশাল

সাক্ষাৎকারঃ আবদুল করিম সরদার, প্রাক্তন এম-পি

২২-১০-১৯৭২

 ২৬শে মার্চ কটকস্থল নামক স্থানে পাক-বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর এক প্রচণ্ড যুদ্ধে পাক-বাহিনীর ৭ জন নিহত ও বহু আহত হয়। অপরপক্ষে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন (পরিমল, আবুল হাশিম ও মোশাররফ) শহীদ হয়। জুলাই মাসের শেষের দিকে কোদালদহে এক যুদ্ধে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়।

প্রতিরোধ-বরিশাল

সাক্ষাৎকারঃ ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান

....... ১৯৭২

 মার্চ মাসে আমি বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলাম। ২৫শে এপ্রিল, ১৯৭১-এ পাকিস্তান সেনবাহিনী বরিশাল দখল করে নেয়। বরিশাল শহরের ৪ মাইল দূরে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি স্থানান্তর করা হয়। ২৫শে এপ্রিল পাকসেনা বাহিনীর গুলিতে কামাল নামে একজন ছাত্র আহত হয়। আমাকে এসে খবর দেয়া হল। তখন সেখানকার হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তার ভয়ে পালিয়ে যায়। আহত ছাত্রটিকে লাকুটিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। জনাব নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, আমি এবং আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা লাকুটিয়া ঘাঁটিতে গেলাম।

 বরিশাল শহরের পতনের পূর্বে মেজর জলিল সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করছিলেন। তিনি, লেফটেন্যাণ্ট হুদা এবং আরো কয়েকজন তদানীন্তন পাকিস্তান সেনাবহিনীর লোক ভারতে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য