পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৮১

 তারা যে উদ্দেশ্যে সেখানে এসেছিল তা সিদ্ধ হোল, মেজর জলিল তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়েছেন।

 তার দু'দিন বাদে মঙ্গলার ঘুমন্ত অধিবাসীরা গভীর রাত্রিতে চমকে উঠে শয্যা ছেড়ে উঠে বসল। মেশিনগান আর রাইফেলের শব্দ রাত্রির নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে চলেছে। ভয়ে কেঁপে উঠল তাদের মন। তবে কি বর্বর পাক-সৈন্যরা বাঙলার উপর হামলা করেছে? উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায় সবাই ঘর ছেড়ে ছুটে এল বাইরে। পরে খবর শুনে আশ্বস্ত হোল, না পাক-সৈন্যরা নয়, তাদের অতি প্রিয় মুক্তিবাহিনী সেই ফ্ল্যাটের সৈন্যদের উপর আক্রমণ করেছে।

 সব কটা সৈন্যকে ওরা নিঃশেষ করে দিয়েছে। আরও জানা গেল, ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে অনেক অস্ত্র ও গোলা-গুলি উদ্ধার করা গেছে।

খুলনা জেলার সশস্ত্র প্রতিরোধ

সাক্ষাৎকার[১]: মোমিন উদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন এম-পি

৮-৬-১৯৭৬

 ১৮৭১ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে বয়রা গ্রামে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ই-পিআর-রা ৩০৩ রাইফেল ও শটগান নিয়ে পাক-ফৌজের বিরুদ্ধে এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধ হয় যশোর রোডে। যুদ্ধে ২টি ট্রাক ধ্বংস হয় এবং পাক-সৈন্যরা পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়।

 এর পরের সংঘর্ষ হয় দৌলতপুরের মিনাক্ষী সিনেমা হলের সম্মুকে ২০শে মার্চ তারিখে। রাস্তার দু'পাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাক ফৌজের ওপর আক্রমণ চালায়। পাকসেনারা তখন ট্রাকে করে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। আক্রান্ত পাকসেনারা রিকয়েললেস গান দিয়ে রশীদ বিল্ডিং ধ্বংস করে। সে সময় ঐ ভবনের ৩ জন লোক নিহত হয়।

 এপ্রিল মাসের ৭ তারিখে পাকসেনারা ট্রাকে করে যশোর থেকে খুলনা অভিমুখে অগ্রসর হয়। খুলনার রেডিও ষ্টেশন তখন পাক-সৈন্যদের দখলে ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা রেডিও ষ্টেশনের ওপর আক্রমণ চালায়। পাকসেনারা রেডিও ষ্টেশনের ভিতর থেকে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এভাবে এক রাত যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে কিছু মুক্তিযোদ্ধা মারা যায়। যশোর থেকে ট্রাকে করে আগত পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালালে মুক্তিযোদ্ধারা আস্তে আস্তে বিলের দিকে পিছু হঠে। যুদ্ধে পাক ফৌজের বেশ কিছু সৈন্য নিহত হয়। খুলনা রেডিও ষ্টেশনকে রক্ষার জন্য যশোর থেকে পাক-সৈন্য তিন দফা আসে। ৭ তারিখের পর পাক-সেনারা দৌলতপুরের রঘুনাথপুর গ্রামে হামলা করে। সেখানে তারা বহু লোককে হত্যা করে।

 খুলনা জেলার তেরখাদা থানায় মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। সেখানে প্রায় দুই হাজারের মতো মুক্তি সেনা ছিল। তারা তেরখাদা থানাকে সব সময়ের জন্য মুক্ত রাখতে সমর্থ হয়েছিল। ফহমউদ্দিন নামে একজন তহশিলদারের নেতৃত্বে ঐ ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়। আব্দুল হামিদ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে। পরে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা নিহত হয়।

ফরিদপুরের প্রতিরোধ[২]

 আকস্মিকভাবে পঁচিশে মার্চ গভীর রাতে রাজধানীতে পাক-হানাদার বাহিনীর হামলার খবর, রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের কথা এবং বঙ্গবন্ধু শখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা ছাবিবশে


  1. বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র থেকে সংকলিত
  2. সাপ্তাহিক 'চিত্রবাংলা' ৩জুন, ১৯৮৩-এ প্রকাশিত শরীফ আফজাল হোসেন-রচিত প্রতিবেদনের অংশ।