পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৩

ইয়াহিয়া ফৌজের ‘বিদ্রোহী’ সেনাকে গুলি করে হত্যা

শুভ্রাংশু গুপ্ত

 মেহেরপুর (কুষ্টিয়া), ৩১ মার্চ-ইয়াহিয়া ফৌজের বিপুলসংখ্যক সেনা মুক্তিফৌজের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে অস্বীকার করেছেন। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন। পুলিশ লাইনেও এই শহরের একটি স্কুলগৃহে এরা ‘বিদ্রোহী’ সেনাদের প্রায় দুশোজনকে তাদের দলপতির নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

 বঙ্গবন্ধু মুজিব কোন এক গোপন ঘাঁটিতে সপরিবারে আছেন। এখানে বঙ্গবন্ধু দু’জন সহকর্মী-আবু আহমেদ আফজল রসিদ এবং মঃ সহীউদ্দিন আমাকে এই সংবাদ দেন। তারা বলেন, মুজিবর রহমানের গ্রেফতার এবং তাঁর পুত্রের হত্যার সংবাদ সম্পূর্ণ তৈরী করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর গোপন ঘাঁটি থেকে সর্বদাই এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

 আগামী এক পক্ষকালের মধ্যে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবর তখন আত্মপ্রকাশ করবেন বলে মুজিবের ওই সহকর্মীদ্বয় জানান।

 ওই দুই নেতা জানান, পাবনা, দিনাজপুর, শ্রীহট্ট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়ার প্রায় পুরো অঞ্চল এখন আওয়ামী লীগের দখলে। মঃ রসিদ জানান, তাঁরা বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের মজুত উদ্ধার করেছেন। সেগুলির বেশির ভাগই চীনের তৈরি। তার মধ্যে হালকা মেশিনগান, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, দুটো কামান ও প্রায় পঞ্চাশটি মিলিটারি ট্রাক রয়েছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ এপ্রিল, ১৯৭১

যশোরের বোমাবর্ষণ

 বনগাঁ, ৩১ শে মার্চ-সারা যশোর শহর দাউ দাউ করে জ্বলছে। সেই আগুনের আভা সন্ধ্যায় হরিদাসপুর থেকেও দেখা গেছে। যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট পুর্নদখলের উদ্দেশে আজ বেলা সাড়ে বারটা নাগাদ পাক সামরিক বাহিনী ৫ খানি বিমানে করে ছত্রীসৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নামিয়ে দেয়। এরপর বিমান বাহিনী থেকে কিছু সময় পর পর বোমাবর্ষণ করা হতে থাকে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত বোমাবর্ষণ চলছে বলে জানা গেছে।

 পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের তীব্র লড়াই চলছে। একদল সৈন্য শহরাঞ্চলে মর্টারের সাহায্য আক্রমণ চালায়। শহরে বহু বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সামরিক বাহিনীর লোকেরা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করছে, কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।

 আজ সকালের দিকে হরিদাসপুর সীমান্ত এলাকায় ৫ জন পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্যের মৃতদেহ এবং একটি কাটা মুণ্ডু দেখতে পাওয়া যায়। এখানে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের মধ্যে হত্যা করে এই মৃতদেহগুলি এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

 খুলনায় এক খবরে প্রকাশ যে, খালিশপুরে একটি চটকল ডিনামাইট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং রূপসা নদীর ধারে তীব্র সংঘর্ষ চলেছে।

 আজ সকালে মুক্তিফৌজের লোকেরা বেনাপোল চেকপোস্টে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে দেয়। সরকারী সূত্রে জানা গেছে যে, মোট ৩২ জন পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্য এই সীমান্ত পার হয়ে আত্মসমর্পন করেছে।

 আগরতলা, ৩১শে মার্চ (পিটিআই)- রাজশাহী, খুলনা ও আরও কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানী স্যাবর জেট আজ বোমাবর্ষণ করেছে। পাক বিমান বাহিনীর এই হানায় বহু নিরস্ত্র লোক নিহত হয়েছে।