পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৫

মুক্তিযোদ্ধারা যশোর দখল করেছে

(নিজস্ব সংবাদদাতা)

 বনগাঁ, ১লা এপ্রিল-আজ বেলা ২টার পরেই বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ সমগ্র যশোহর শহর দখল করে নিয়েছে। পাক-সেনাবাহিনী শহরের তিন মাইল দূরে ক্যাণ্টনমেণ্টের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।

 বিশেষ নির্ভরযোগ্য সূত্রে আজ সন্ধ্যায় এখানে ঐ খবর পাওয়া গেছে। প্রকাশ যে, সকালে মুক্তিফৌজ যশোর সেণ্ট্রাল জেলের গেট খুলে ১০০০ বন্দীকে মুক্ত করে দেয়।

 আজ বনগাঁ স্টেশনে সাদা পোশাকে একজন পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্য জনতার হাতে ধরা পড়ে। তাকে জেল হাজতে রাখা হয়েছে। ঐ সৈনিকটি নাকি বলেছে যে, খুলনায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যশোহর ক্যাণ্টনমেণ্টের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। খুলনা থেকে বারবার সাহায্য চেয়ে যশোহর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তখন তারা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঢাকা থেকে নাকি তাদের বলা হয়েছে-যে যেভাবে পার, প্রাণ বাঁচাও। ঐ নির্দেশ পাবার পর সৈনিকটি সাদা পোশাকে কোনমতে বনগাঁয় এসেছে।

-যুগান্তর, ২ এপ্রিল, ১৯৭১

বাংলাদেশের পশ্চিম ও উত্তর এলাকা মুক্তিফৌজের দখলে

 ঢাকা, কুমিল্লা প্রভৃতি জেলা শহরগুলির ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকা ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সামরিক ঘাঁটিগুলি ছাড়া বাংলাদেশের সব এলাকা পাক সামরিক শাসনের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, শহর ও জনপদে উড়ছে স্বাধীন বাংলার জয় পতাকা। দলে দলে পাঠান সৈন্য আত্মসমর্পন করেছে, অনেকে মুক্তিসেনাদের তাড়া খেয়ে শূন্য হাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আত্মসমর্পণ করেছে।

 কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর একে একে মুক্তিফৌজের দখলে চলে আসছে। তবে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে পাকফৌজের আক্রমণ বন্ধ হয়নি এবং ঐ আক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য স্বাধীন বাঙলা সরকার সারা বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রিয় দেশ ও জাতিগুলির কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।

 সীমান্ত শহর হাসনাবাদ থেকে ইউ-এন-আই জানাচ্ছেন, গত রাত্রে যশোহর জেলার মাগুরায় প্রায় ৩৫০ জন পাক-সৈন্য বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে।

 সৈন্য দলটি ১৩টি গাড়ী যোগে যশোহর অভিমুখে যাওয়ার সময় মুক্তিফৌজের বহু লোক ও আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক তাদের ঘিরে ধরে।

 চারদিন তীব্র যুদ্ধ চলার পর গতকাল পাক-সৈন্যদল ক্যাণ্টনমেণ্টে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হলে যশোর শহর মুক্তিযোদ্ধাদের করতলগত হয়।

 কৃষ্ণনগর (নদীয়া) থেকে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ, রাজশাহীতে এখনও যুদ্ধ চলেছে। এখানে দুইজন মেজর সহ অন্তত একশ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। প্রকাশ, এই এলাকায় মুক্তিফৌজের পরিচালনা করছেন বেঙ্গল রেজিমেণ্টর একজন কর্নেল। জানা গেছে, তারা শতাধিক রাইফেল শত্রুদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।

 রাজশাহী ও লালমনিরহাটে এখন তীব্র লড়াই চলছে। গত কয়েকদিন ধরে এই দুইটি অঞ্চল পাক সৈন্যদের দখলে আছে।

 এক সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম পাকিস্তান রেজিমেণ্টর অধিকাংশ সৈন্যই প্রচণ্ড যুদ্ধের পর মুক্তিফৌজের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।