পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯৯

গুরুত্বপূর্ণ রেলশহর পাবর্তীপুর মুক্ত

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

 ৬ এপ্রিল-উত্তরখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ রেলশহর পাবর্তীপুরে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ল। আজ ভোর না হতেই মুক্তিফৌজের পাবর্তীপুর অভিযান শুরু হয়েছিল। দুই হাজারের মত মুক্তিফৌজ বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাবর্তীপুরের ওপর। অবশেষে ছিনিয়ে নিয়ে এলেন শত্রু হাত থেকে। পাবর্তীপুর আজ স্বাধীন, শত্রুমুক্ত।

 পাবর্তীপুর দখলের আগে এই শহরের দু’মাইল দূরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে বসে মাঝে মাঝেই গুলির শুনছিলাম। তিনটায় আওয়ামী লীগ নেতা মহম্মদ আনোয়ার তখন দুটি স্টেনগান দেখিয়ে বলেন যে, ওই দুটি তারা পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। আলোচনার কিছু পরেই পাবর্তীপুর থেকে জয়ের খবর আসে। মুক্তিফৌজের মেজর মনসুন আলি ছুটে এসে ওই খবর দেন। আওয়ামী লীগের আর একজন নেতা এম এ কুদ্দুসকে জিজ্ঞসা করলাম, ‘পাবর্তীপুর দখল’ — একথা বলছেন কেন? তিনি বললেন, এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি দখলের জন্য গত রাত্রি থেকে পাক সেনারা চেষ্টা করছিল। তারা এই শহর দখলের মরিয়া হয়ে ওঠে।

 বিকালে দিনাজপুরে ও বগুড়া থেকেও মুক্তিফৌজের জয়ের খবর আসে। ওই দুই স্থানে পাক সৈন্যবাহিনী প্রচণ্ড বোমা বর্ষণ করে।

 আরও খবরঃ রাজশাহী, ফরিদপুরের যে ক’টি জায়গা পাক সেনারা দখল করে রেখেছে মুক্তিফৌজ তাও দখলের চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হল যে, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর ও পাবনার অধিকাংশ অঞ্চল মুক্তিফৌজের দখলেই।

পূর্ব রণাঙ্গনের খবর

 চট্টগ্রাম জলধার ক্ষতিগ্রস্তঃ আগরতলা, ৬ এপ্রিল-সীমান্তের ওপার থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর এসেছে, তিন দিন আগে মুক্তিফৌজ চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিমাংশে কোর্ট এলাকায় অবস্থিত ওয়াটার ওয়ার্কস এর জলাধার ও পাওয়ার হাউস ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছেন। এই এলাকায় পাক বাহিনী দিনরাত্র ঘাঁটি আগলাচ্ছিল।

 চট্টগ্রাম শহরের ডাকঘর ও বিমানবন্দর এলাকা সম্পূর্ণরূপে পাক দখলদারদের হাতে। বন্দর এলাকা পরিত্যক্ত জনমানবশূন্য।

 সারা নোয়াখালী জেলা, নোয়াখালীর লাগোয়া কুমিল্লার কিছু অংশ এবং চট্টগ্রাম জেলা এখন সম্পূর্ণভাবে পাক সৈন্য মুক্ত। এসব মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশে সরকারের অধীনে অসামরিক প্রশাসন ফিরে আসছে।

 আবার স্বাধীন বাংলা বেতারঃ “স্বাধীন বাংলা বেতার” কেন্দ্র আবার ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার শর্ট ওয়েভে এর অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে ঘোষণাগুলি একরকম শোনাই যায়নি। আগে এই কেন্দ্রটি ছিল চট্টগ্রামের কাছে, পরে পাক ফৌজ-এর তোপের মুখে উড়ে যায়। নতুন জীবন ফিরে পেয়ে স্বাধীন কেন্দ্রটি ঘোষণা করেছে দু’এক দিনের মধ্যেই মিডিয়াম ওয়েভ-এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে।

 সোমবার শিলং-এ সন্ধ্যা ছটায় ৮১ থেকে ৮২ মিটারে (শর্ট ওয়েভ) অনুষ্টান শোনা যায়। প্রচারিত গানগুলির মধ্যে “আমার সোনার বাংলা” তো ছিলই, উপরন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা” গানটি শোনা যায়।