পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৩

মুক্তিফৌজের এই সাফল্যের বিবরণ দান প্রসঙ্গে বলেন, ঐ যুদ্ধে অন্ততঃ ২১জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। মক্তিফৌজ মেশিনগান, রাইফেল, রকেট নিক্ষেপক প্রভৃতি প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাগুলি পলায়মান পাকিস্তানী বাহিনীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন। তাছাড়া গত ১লা মে নোয়াখালীর ফেনাঘাটা সেতুর কাছে মুক্তিফৌজের কমাণ্ডো বাহিনীর আক্রমনে আরও পাকিস্তানী সেন্য নিহত হয়েছে।

 উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গনেঃ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গনে লালমণিরহাটের কাছে দলহাটিতে (তালাহাটি?) মুক্তিফৌজ ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

-যুগান্তর, ৫ মে, ১৯৭১

মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি, আখাউড়ায় জোড় লড়াই

 আগরতলা, ৬ মে- বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিফৌজের তৎপরতা দারুণ বেড়ে গিয়েছে। মুক্তিফৌজের অতর্কিত আক্রমনে পাক-বাহিনী নাজেহাল। বহু পাক-সেনা নিহত হয়েছে। বহু যায়গায় পাক-সেনা পিছু হটেছে। বৃহস্পতিবারও আখাউড়ায় দুই পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই চলেছে। মুক্তিফৌজ এখানে পাক-বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে পেরেছে। আখাউড়ার কাছেই গঙ্গাসাগর ও উজানিশর সম্পূর্ণভাবে মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে। মুক্তিফৌজের একজন কমাণ্ডার জানিয়েছেন, আখাউড়ার যুদ্ধে ১২০ জন পাকসেনা খতম হয়েছে। পাকসেনাবাহিনী আখাউড়া ও কুমিল্লার মধ্যে সরাসরি সড়ক পথে সংযোগ স্থাপনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ জন পাক সেনা। মুক্তিফৌজ এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। দিনাজপুর ও রংপুরেও পাক-বাহিনীর উপর মুক্তিফৌজ গেরিলাবাহিনী বার বার আক্রমণ চালায়।

 বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গনে কুড়িগ্রাম ও লালমণিরহাটে উভয় পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই হয়। গেরিলা আক্রমণে পাক-বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়। লালমনিরহাটে ২৯জন পাক-সেনা নিহত হয়। দিনাজপুর জেলায় ঘোড়াঘারি ও প্রেমতলাতে মুক্তিফৌজের হাতে চারজন পাক সেনা খতম হয়েছে।

 বরিশালেও মুক্তিফৌজের সাফল্য অব্যাহত। এখানে দ্বারকাপুরে পাক-সেনা বোঝাই একটি নৌকা মুক্তিফৌজ ডুবিয়ে দিয়েছে। ফলে বহু পাক-সেনার সলিলসমাধি ঘটেছে। ময়মনসিংহের উত্তর-পূর্বে আলমপুরে পাক-সেনা ও মুক্তিফৌজের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে।

 মুক্তিফৌজের আক্রমণে নাজেহাল পাক-সেনাদল শ্রীহট্ট জেলার হবিগঞ্জের পশ্চিমে ২টি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়।

 গত দুদিন ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করার পর আজ পাক-বাহিনী চট্টগ্রামের দক্ষিণে কক্সবাজার দখল করে নেয়। কক্সবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।

 গেরিলা তৎপরতা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পাক-সেনা কর্তৃপক্ষ পশ্চিমাঞ্চলের চিলাতহ শহরে কারফিউ জারি করেছে।

 দেবগ্রামে মুক্তিফৌজ ও পাক-সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়। এখানে প্রায় ১০০জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। ধরমানি চা বাগান এলাকা থেকে প্রায় ৮০০ জনের এক পাক-সেনাদলকে মুক্তিফৌজ তীব্র আক্রমণ চালিয়ে হটিয়ে দিয়েছে। এখানে প্রায় ২০০ জন পাক-সেনা মারা গিয়েছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৭ মে, ১৯৭১