পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪২৫

একজন সেনা মানওয়ার আলিকে বন্দী করেছে। তার গায়ে গুরুতর নীতেআগাতের চিহ্ন ছিল। মোঘলহাটে মুক্তিফৌজ দুজন পাক গুপ্তচরকে গুলি করে হত্যা করেছে। একজন গুপ্তচরকে বন্দী করা হয়েছে তার নাম মহম্মদ মণ্ডল। কুষ্টিয়া, যশোর ও রংপুর এলাকয় মুক্তিফৌজ পাক সেনাবাহিনীর গাড়ীগুলির উপর চোরাগুপ্তা আক্রমণ চালালে প্রচুর পাকসেনা নিহত হয়।

 বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যাবস্থা চালুঃ ইউএনআই জানাচ্ছে, বাংলাদেশের রংপুর ও দিনাজপুর জেলার মুক্ত এলাকায় অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মুক্তিফৌজ ওই সমস্ত এলাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছেন।

-আন্দবাজার পত্রিকা ৯মে, ১৯৭১

কুমিল্লা ও আখাউড়ায় তিনদিন তুমুল লড়াইঃ

তিনশ’পাকসেনা খতম

 আগরতলা, ৯ই মে (ইউএনআই) আখাউড়ায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর আজ তিনদিন ধরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। এই যুদ্ধেবাংলাদেশের সেনাবাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত পাকবাহিনীর প্রায় দু’শ সেনা নিহত হয়েছে বলে মুক্তিফৌজের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। কোহিমায় শ্রুত স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, আখাউড়া ও কুমিল্লা খণ্ডে বাংলাদেশ মুক্তিফৌজের হাতে তিনশ পাক হানাদার নিহত হয়েছে। বেতারে আরও বলা হয়, বিপুল সংখ্যায় সেনা খতমের ফলে পাকবাহিনীর বেলুচি সৈন্যদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। উক্ত সুত্রে প্রকাশ, মুক্তিফৌজের দু’জন সেনা নিহত, তিনজন আহত এবং দু’জন নিখোঁজ হয়েছেন।

 পাক হানাদার বাহিনী আখাউড়া- আগরতলা চেক পোস্টের এক হাজার গজের মধ্যে এসেছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী চেকপোস্টের কাছেই ঘাঁটি আগলে রয়েছে, তাই এই জায়গাটিই পাক বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্য। বাংলাদেশের সূত্রে প্রকাশ, পাক বাহিনী তিন কোম্পানী সেনার দ্বারা অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ব্যুহ রচনা করে মুক্তিফৌজের এক কোম্পানী সেনাকে চেকপোষ্ট এলাকা থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছ। আখাউড়া শহরে অতিরিক্ত এক কোম্পানী পাকসেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।

 নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ত্রিপুরা- বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবার প্রয়াসে পাকবাহিনী বিপুলসংখ্যক সেনাদল নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেছে। এই উদ্দেশ্যেই তারা রামগড় দখলের পর আজ হঠাৎ আখাউড়া ও বিবিরবাজার এলাকায় আঘাত হেনেছে।

 একটি বড়সড় পাকবাহিণী আখাউড়া শহর থেকে এগিয়ে আগরতলা চেকপোস্ট থেকে মাইল খানেক দূরে জাঘীশার সেতুর কাছে উপস্থিত হয়েছে। বিপরীত দিকে, আজ সকালে মুক্তিফৌজ আগরতলা চেকপোষ্টের আড়াই মাইল দূরে ফকিরমুড়া সীমান্ত ফাড়িটি দখল করে নিয়েছে। সকাল থেকেই আখাউড়ার রাজাপুর অঞ্চলে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলতে থাকে।

 কুমিল্লা খণ্ডে লড়াইঃ সীমানার এপারে দাঁড়িয়েও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কামানের গোলার শব্দ চারদিকে কাঁপিয়ে তুলছে। ওদিকে আগরতলা থেকে ৬ মাইল দূরে আখাউড়া উপখণ্ডে এখনও যুদ্ধ চলছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা কমাণ্ডোরা সাফল্যের সঙ্গে শত্রুসৈন্যদের প্রচুর সংখ্যায় হতাহত করেছেন। তবে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রবল গোলাবর্ষণের মুখে তাঁরা ফকিরমুড়া থেকে প্রথম পশ্চাদপসারণ করতে বাধ্য হন। আগে ৭ই মে মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুসৈন্যদের কসবা ও আখাউড়ার মধ্যবর্তী রাজাপুর গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে দেন।