পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৩৮

চুকনগরে পাকসৈন্যের বেপরোয়া গুলি

 হাকিমপুর ৩১ মে (সংবাদদাতা)- পাকিস্তানী সামরিক বর্বরতা অবশেষে সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে। গত ২০ মে খুলনার বৈঠাঘাটা, ফকিরহাট, রামপাল, নকিপুর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় লক্ষের মত অসহায় মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসার সময় চুকনগরে বর্বর বাহিনী তাঁদের ওপর মেশিনগান দিয়ে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে সেখানে বহুসংখ্যক নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়।

 ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, খুলনার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আনুমানিক দেড় লক্ষ মানুষ সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ১৯মে কয়েক হাজার নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। চুকনগরের নিকটবর্তী নদীর ওপরে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পদব্রজে রওয়ানা হয়ে যায়। চুকনগরে তারা মিলিটারীর সম্মুখীন হয়ে। সে সময় পিছনে যারা তাঁরা মেশিনগানের শব্দ শুনে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। চুকনগরের বাজারের বিভিন্ন ঘরগুলোতে শরণার্থীরা আশ্রয় নিলে বর্বর বাহিনী সেখানে গিয়ে ঘর থেকে বের করে তাদের অনেককে হত্যা করে।

 সীমান্ত অতিক্রম করার পর শতাধিক আহতকে হাকিমপুরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ২২ তারিখে গুলিতে আহত শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড়শত বলে হাকিমপুরের মুক্তিফৌজের চিকিৎসক জানান।

বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেরিলা বাহিনীর তৎপরতা

 আগরতলা, ১জুন (ইউএনআই) মুক্তিফৌজ গেরিলা বাহিনী শ্রীহট্ট সেক্টরের তেলিপাড়া ও আখাউড়ার মধ্যে সংযোকারী রেল সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে। গেরিলা বাহিনী এই স্টেশন দ’টি দখলের জন্য পাকফৌজের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।

 একটি পাকিস্তানী জীপগাড়ির ওপর গেরিলা বাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে শত্রুপক্ষের ২ জনকে খতম করে। কুমিল্লা সেক্টরে গেরিলাবাহিনী রেল ইঞ্জিন ও ওয়াগনকে লাইনচ্যুত করে দিতে সক্ষম হয় বলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধাদের সংবাদে প্রকাশ। ময়মনসিংহ সেক্টরে গেরিলা বাহিনী পাকফৌজের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে ৭ জন পাকসৈন্যকে সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার করে। পাক ঘাঁটির পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে গেরিলারা সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

-কালান্তর, ২, জুন ১৯৭১

কমাণ্ডো আক্রমণে পাকসৈন্য মরছে

 আগরতলা ৩রা জুন (ইউএন আই) বিভিন্ন স্থানে পাকসৈন্যের ওপর মুক্তিফৌজের কমাণ্ডো আক্রমণে আবার জোরদার হয়ে উঠছে। গজারিয়া, চাঁদহাট, রাজানগর ও ফরিদপুর এলাকায় মক্তিফৌজের আক্রমণে পাকসৈন্য নাজেহাল হয়েছে।

 বগুড়া অঞ্চলে পয়লা জুন মুক্তিফৌজ পাকসৈন্যের একটি সাঁজোয়া গাড়ী দখল করে নেন। ঐ গাড়ীতে তিনটি রেডিও সেট ও ছয়টি স্টেনগান ছিল। একজন কমাণ্ডারের গাড়ী ও মুক্তিফৌজ দখল করে নেন। পশ্চিম বগুড়ার আর একস্থানে আক্রমণ চালিয়ে তাঁরা কয়েকজন পাকসৈন্যকে খতম করেন। আর একটি সংঘর্ষে পাকিস্তানের টহলদার বাহিনীর সাতজন সৈন্য নিহত ও দুজন আহত হয়।

 আসাম সংলগ্ন কানিরঘাটে মুক্তিফৌজের সঙ্গে প্রবল লড়াই চলছে। মুক্তিফৌজের এই শক্তঘাটিতে পাকিস্তানকে ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়োগ করতে হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গত ২৪ঘণ্টায়