পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৪৫

এবং চাকমা সেনাও নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী তবলছড়িতে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে নেয়। এই অঞ্চলে পাকসেনাদের অমানুষিক অত্যাচার সত্বেও বাঙ্গালী অধিবাসীরা দৃড় মনোবল নিয়ে তাদের মোকাবেলা করছেন, মহিলা এবং কিশোরীরাও মুক্তিবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।

 কুমিল্লা জেলার ননীপুর ও ফকিরহাটে গুপ্তস্থান হঠাৎ আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজের গেরিলা দল ২০ জন পাকসেনাকে খতম করে। মিয়ার বাজারে ও মুক্তিফৌজের হাতে পাক হানাদার বাহিনীর আটজন মারা পড়ে। এখানে তিন ঘণ্টা লড়াই চলে। পাকসেনারা মর্টার ও মেশিনগানে চালিয়ে মুক্তিফৌজের পাঁচজন যোদ্ধাকে আহত করে। শ্রীহট্ট জেলার মির্জাপুরে মুক্তিবাহিনী মেশিনগান ও মর্টার চালিয়ে পাকসেনাদলের একজন অফিসার ও দশজন সৈন্যকে হত্যা করে।

 দিনাজপুরেও গেরিলা তৎপরতাঃ রায়হগঞ্জ, ১০ জুন গেরিলা ইউনিট দিনাজপুরে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তৎপর হয়ে উঠছে। ছোট ছোট দল গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ পাক দখলদার বাহিনীকে যথেষ্ট বিব্রত করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে ঠাকুরগাঁও মহকুমা এলাকায় রুহিয়া রেল স্টেশন থেকে ১ ফার্লং দক্ষিনে ৫০ ফুট দীর্ঘ রেল লাইন মুক্তিফৌজ ডিনামাইট দয়ে উড়িয়ে দেয়। পাক সেনবাহিনীর লোকেরা গুলি চালাতে থাকে। মুক্তিফৌজ গেরিলারা পিছন থেকে পাক সৈন্যদের আক্রমণ করে ৭ জনকে হত্যা করে। ওই এলাকার মঙ্গলপুর ও বাজানহারের মধ্যবর্তী একটি রেলওয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেয় এবং রুহিয়া থেকে ৪/৫ মাইল দূরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতুও তারা উড়িয়ে দেয়। বোচাগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈলে গেরিলা বাহিনী বেশ কয়েকজন পাক সেনাদের তাঁবেদার গুপ্তচরকে খতম করে।

-যুগান্তর, ১২ জুন, ১৯৭১

গেরিলা আক্রমণে বাংলা বাহিনীর অপূর্ব সাফল্য

 বর্তমানে মুক্তিফৌজ তাদের গেরিলা আক্রমণে বাংলাদেশের সর্বত্র পর্যুদস্ত করেন। গত সপ্তাহে বাংলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী বহু পাকসৈন্যকে হতাহত করেন। গত ৬ই জুন মেহেরপুরের নিকটে ইছাখালিতে এক গেরিলা যুদ্ধ মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের একজন অফিসারসহ চারজনকে খতম করেন। যশোহর এলাকায় মুক্তিবাহিনী মেশিনগান ও মর্টারের সাহায্যে পাকবাহিনীর ১ টি শিবির অতর্কিতে আক্রমণ করে কমপক্ষে ২০ জন পাকসৈন্যকে হত্যা ও অনেককে হতাহত করেন তাদের ক‘খানা গাড়ী ও বহু সংখ্যক ভারী ও হালকা অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেন। কালাচাঁদপুরের দিকে পাকসেনার অগ্রতির এক খণ্ড যুদ্ধে মুক্তিফৌজ তাদের ১ জন লেঃ কর্নেলকে আহত করেন। এই যদ্ধে বাংলা বাহিনী ১টি সেতু ও পাকসেনার ১টি ঘাঁটি ধ্বংস করেন।

 বগুড়া জেলার রাঙ্গামাটি এলাকা এখন সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন। সিলেটের সরলবাগে বাংলাবাহিনী পাকসেনার ১ টি ঘাঁটি দখল করে ও এর সন্নিকটে ২ টি গানবোট বিনষ্ট করেন। সিরাজগঞ্জে তারা একটি রেল সেতু সম্পূর্ণরুপে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হন। দিনাজপুর রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ ৭৫ জন পাকসেনাকে হত্যা, বহু জনকে আহত ও ১৪ জনকে বন্দী করে। উত্তরাঞ্চলে উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধারা এক ঝটিকা আক্রমণে ৪০ জন পাকসৈন্য কে হত্যা করেন। এছাড়া খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লাতে কদিনের যুদ্ধে তারা প্রায় দুশো-এর অধিক পাকসৈন্য হত্যা করেছেন।

-বাঙ্গবাণী,১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, ১৩ জুন, ১৯৭১

মেহেরপুরের পাকবাহিনীর এক সৈন্য খতম

 কৃষ্ণনগর ১৩ জুন (পি, টি, আই) মুক্তিফৌজ গতকাল বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম খণ্ডে বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী ফৌজের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। মেহেরপুরের অদূরে তারা পাক ফৌজের এক প্লাটুন সৈন্য