১৬ই ডিসেম্বর সকালে মেজর জেনারেল নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী একটি হেলিকপ্টারে এসে সাভারগামী সড়কে মিরপুর ব্রিজের পরবর্তী ব্রিজের কাছে নামলেন। সঙ্গে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার। বলছিলেন কাদের সিদ্দিকীঃ ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার টঙ্গী অভিমুখে এগিয়ে যাওয়া বাহিনীর অধিনায়কত্ব করছিলেন। সাভারগামী বাহিনীর অধিনায়কত্ব করছিলেন ব্রিগেডিয়ার সানত সিং। হেলিকপ্টার থেকে নেমে মেজর জেনারেল নাগরা জেনারেল নিয়াজীর কাছে একটি চিঠি লিখলেন। তাতে তিনি নিয়াজীকে লিখলেন, আমি অমুক জায়গায় রয়েছি। তুমি আত্মসমর্পণ করবে কিনা জানাও এবং উত্তর দাও। ভারতীয় বাহিনীর একজন মেজরকে বাহক করে চিঠি পাঠানো হলো। তার সাথে রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর তিনজন জওয়ান ও পথ চেনাবার জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা। দু'টি জীপ তাদের নিয়ে চলে গেলো। জীপের সম্মুখে সাদা পতাকা। সঙ্গে কোন অস্ত্র নেই। নিয়াজী চিঠি পেয়ে জানাল যে, সে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তত। কিন্তু কোন লিখিত ভাষ্য সে দিল না। পাকবাহিনীর মেজর জেনারেল জামশেদকে পাঠিয়ে দিল। জামশেদ এসে মেজর জেনারেল নাগরাকে স্যালুট করলো। তখন নাগরা বললেন, “শুনো সিদ্দিকী, হামকো স্যালুট করেগা তো হাম লেগা আউর তুম লেগা। হামলোগ দো এক সাথে আয়া হ্যায়।' জামশেদ এসে তার নিজের রিভলভার ও মাথার ফৌজি টুপি তুলে দিল সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে। রিভলভারটি গ্রহণ করলে মেজর জেনারেল নাগরা এবং টুপি তুলে দিল আমার হাতে। জেনারেল নাগরা তখন আমকে বললেন, আরে সিদ্দিকী, ক্যামেরাম্যান হ্যায়? ইয়েতো হিস্ট্রি বন যায়েগা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সে সময়ে কোন ক্যামেরাম্যান সেখানে ছিল না। মেজর জেনারেল জামশেদ যখন আত্মসমর্পণ করলো, তখন সকাল দশটা।
কাদের সিদ্দিকী বললেন, 'আমরা ঠিক করলাম যে, জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। মিরপুর ব্রিজের এপারে এলাম জেনারেল নাগরা, ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার, ব্রিগ্রেডিয়ার সানত সিং ও আমি। এলাম পাক বাহিনীর গাড়ীতে চেপে। রাস্তায় প্রহররাত পাক বাহিনী আমদের স্যালুট ঠুকছে। আমাদের বাহিনী পড়ে রইলো পেছনে। এপারে এসে এক জায়গায় টেলিফোন করতে গিয়ে দেখি কোন শব্দ নেই। টেলিফোন ডেড। লাইন কাট আপ। এলাম মোহাম্মদপুর। নিয়াজীকে টেলিফোন করা হলো কিন্তু সাড়া নেই রিং হচ্ছে না। তখন জেনারেল নাগরা বললেন, ঊন লোক চালাকি কিয়া। যেধার যাতাহু ওধারই লাইণ নেহী হ্যায়। তখন সকাল প্রায় সোয়া দশটা পেরিয়েছে। জেনারেল নাগরা তখন ভাবছেন যে আমরা ক্যাণ্টনমেণ্টে যাবো কি যাবো না। যাওয়াটা কি ঠিক হবে। আমি বললাম, যখন এসেই পরেছি তখন যাবোই। তারপর দশটা চল্লিশ মিনিটে আমরা ক্যাণ্টসমেণ্ট নিয়াজীর দফতরে পৌঁছলাম। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। নিয়াজী এসে স্যালুট করলো। নাগরা স্যালুটের জবাব দিলেন। নাগরা বসলেন। নিয়াজী বসলো। নাগরা তখন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, ইয়ে হ্যা ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার, ইয়ে হ্যায় ব্রিগেডিয়ার সানত সিং, আউর ইয়ে হ্যায় বাংলাদেশ বাহিনীর কাদের সিদ্দিকী। নিয়াজী তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে স্যালুট করলো এবং করমর্দনের জন্যে হাত বাড়িয়ে দিল। আমি তখনো বসে রয়েছি। ইতস্তত করছি, আর ভাবছি নিয়াজীর সাথে হ্যাণ্ডসেক করবো কিনা। নিয়াজী তখনো হাত বাড়িয়ে রয়েছে। জেনারেল নাগরা বললেন, কেয়া হুয়া সিদ্দিকী, হাত মিলাও। তুমকে নিয়াজীকে সাথে নেহী-এক ইনসানকে সাথ হাত মিলাতা হ্যায়। মিলাও।
কাদের বাহিনী সম্পর্কিত আরো বিবরণ-৩[১]
১৪ই মে বহেরাতৈল গ্রামে মুক্তিবাহিনীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের পর কয়েজন প্রতিভাবান দেশভক্ত ছাত্র কাদের সিদ্দিকী সাথে এসে যোগ দিলেন এবং দেশমাতৃকার মুক্তি সাধনে জীবন করার শপথ নিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আলম শহীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র নুরুন্নবী, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
- ↑ কাদের বাহিনীর বিভিন্ন সাংগঠনিক দিক সম্পর্কে এ বিবরণ গৃতীত হয়েছে মোহাম্মদ মোদাব্বের ও শিরিন প্রেস, ঢাকা প্রকাশিত মুক্তি সংগ্রামে বাঘা সিদ্দিকী (১৬ ডিসেম্বর ৭৩) গ্রন্থ থেকে। কাদের বাহিনী সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য গ্রন্থটি দ্রষ্টব্য)।