পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬০

এনায়েত করিম, সৈয়দ নজরুল ইসলাম। রঞ্জু, মুসা ও ফজলু নামক তিনজন ছাত্রও এই সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। অছাত্রদের মধ্যে সামরিক বাহিনী থেকে দলত্যাগী ক্যাপ্টেন ফজলুর রহমান এবং লোকমান, গফুর, লাবিবুর বহুমান, লাল্টু ও সরওয়ার মুক্তি সংগ্রামে যোগদান করে। লাবিবুর রহমান পরে এক সম্মুখ সংঘর্ষে শাহাদাৎ বরণ করেন।

  প্রকৃতপক্ষে চারান সংঘর্ষ সাফল্যের পর দেশবাসির মনে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হল। ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে আমাদের জয় যে সুনিশ্চিত, এ কথা দেশের তরুণদের মধ্যে প্রত্যয় সৃষ্টি করলো। তাই দলে দলে তরুণ, যুবক ও ছাত্ররা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য পাহাড় এলাকায় মুক্তিবাহিনী ঘাঁটির তল্লাসে বেরিয়ে পড়লো। যথারীতি পরীক্ষার পর তাদের মুক্তি বাহিনীতে ভর্তি করা হলো।.......

  মুক্তিবাহিনীর সদর দফতরসহ মুক্ত এলাকা ছিল উত্তরে মধুপুর ময়মনসিংহ সড়কের দক্ষিণ থেকে কালিয়াকৈর-এর উত্তর পর্যন্ত ৫০ মাইল জঙ্গল এলাকা, পূর্বে ভালুকা, গফরগাঁও ও শ্রীপুর। পশ্চিমে টাঙ্গাইল মধুপুর সড়ক ৩০ মাইল। অথ্যাৎ এই ১৫০০ বর্গমাইল এলাকা কাদেরিয়া বাহিনীর করায়ত্ত নিরাপদ ছিল। এই অঞ্চল রক্ষার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করতে হবে, সে জন্য এই এলাকে এক শক্তিশালী বৃত্তাকারে প্রতিষ্ঠিত রক্ষাব্যূহে দ্বারা পরিবেষ্টিত করা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে অধিনায়ক সিদ্দিকী বিচক্ষণ সেনানায়কের ন্যায় নিম্নলিখিতভাবে ঘাঁটি পত্তন করলেন এক একজন দক্ষ নায়কের অধীনেঃ-

  ১। বহেরা ৪নং কোম্পানী। অধিনায়ক ক্যাপ্টেন ফজলুর রহমান, সহকারী গোলাম মোস্তফা।

  ২। মরিচা - নং কোম্পানী। কমাণ্ডার নবী নেওয়াজ খান।

  ৩। দেওয়াপাড়া ১ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার লোকমান হোসেন।

  ৪। রাঙ্গামাটি ১ নং (কো) কোম্পানী। কমাণ্ডার আবদুল হাকিম।

  ৫। আসিম ১১ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার লালু, সহকারী সারোয়ার হোসেন।

  ৬। রাঙ্গামাটি ১২ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার। মুনির হোসেন।

  ৭। ভালুকা- শ্রীপুর ৬ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার আফসারউদ্দিন আহম্মদ।

  ৮। হতেয়া ১২ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার হাবিবুর রহমান, সহকারী ইউনুস আলী।

  ৯। পাথরঘাটা ৩ নং কোম্পানী। কমাণ্ডার মোকাদ্দেস আলী খান। সহকারী মতিউর রহমান।

  সঙ্গে সঙ্গে আর আরেকটি মুক্তাঞ্চল গড়ে ওঠে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ সড়কের পশ্চিম দিক থেকে যমুনার পার পর্যন্ত বিরাট চরভর এলাকা, উত্তরে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে দক্ষিণে নাগরপুর পর্যন্ত ধলেশ্বরী যমুনার চর। অঞ্চল মিলে গড়ে ওঠে এই মুক্ত এলাকা। এই অঞ্চলের আঞ্চলিক সদর হল ভুয়াপুর থানায়।

  এই নতুন মুক্তাঞ্চলের জন্য নিম্নরুপে তিন কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হয়।

  ১ নং (খ) কোম্পানী-নায়ক- আবদুল গফুর।

  ১ নং (গ) কোম্পানী-নায়ক-খুরশিদ আলম।

  বাঘা কোম্পানী নায়ক হাবিবুর রহমান। এই বাঘা কোম্পানীর উপর বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয় নদী পথ পাহারা দেওয়ার। ছোট ছোট টাপুরে নৌকা সব সময়ে প্রস্তত রাখা হত নদীতে টহল দেওয়া ও দুশমনের লঞ্চ ও গানবোট এ্যামবুশ করার জন্য।