পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৬

মোঃ আবদুল মান্নান ৬। শ্রী-অনীলচন্দ্র সাংমা ও ৭। ছমির উদ্দিন মিয়ার সহযোগিতায় সর্বপ্রথম মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। মোঃ আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়া বাজু যুদ্ধে এবং শ্রী অনীলচন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে নিহত হন।

 মুক্তিবাহিনী গঠনে সক্রিয়ভাবে যাঁরা সাহায্য করেছেন তাঁরা হলেন মোঃ জবান আলী ফকির, ডাঃ হাফিজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ আবদুর রাজ্জাক, মোঃ আবদুল হামিদ, মোঃ মোসলেম মিয়া, বাবু প্রেম অধিকারী এবং মোঃ হাফিজুর রহমান। উক্ত পার্টি ভালুকা, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, ত্রিশাল, কোতোয়ালী, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর বাশাইল, কালিহাতি, মির্জাপুর এবং মুক্তাগাছা ইত্যাদি এলাকায় কাজ করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করে। পরিচালিত জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ সকল সদস্যসহ মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করবার জন্য এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবার জন্য শপথগ্রহন করেন।

 ২৬-৪-৭১ বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ঢাকাতে ও দুস্কৃতকারীদের নিকট থেকে অস্ত্র উদ্ধার কার্য শুরু করা হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মোট ২৫টি রাইফেল বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করা হয়। ২-৫-৭১ অধিনায়ক আফছারউদ্দিন আহমদ সাহেবের নেতৃত্বে ভালুকা থানা হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করা হয় এবং সেখানে থেকে ১০টি রাইফেল এবং ১৫৫০ রাউণ্ড গুলি ও ৩০টি বেয়নেট উদ্ধার করা হয়। ১২-৫-৭১- টাঙ্গাইল জেলার বল্লা এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গে অধিনায়ক আফছার সাহেব একটি কোম্পানী নিয়ে বল্লা আক্রমণ করেন। উক্ত যুদ্ধে ৫১ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। ২০-৫-৭১-ভালুকা থানার বাইন্দা গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত, লুণ্ঠনকারী ও পাক বাহিনীর দালাল ইছহাক খানকে হত্যা করা হয়। ২১-৫-৭১- এই দিনে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ২টি ব্রেটাগান, ১০টি রাইফেল এবং এক বাক্সগুলি উদ্ধার করা হয়।

 ২২-৫-৭১- অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার কাওরাইদ রেল স্টেশনের উত্তর পার্শ্বস্থিত গ্রাম গয়েশপুর থেকে মুক্তিসেনা নুরুল ইসলামের সহায়তায় ২টি চাইনীজ রাইফেল এবং ৬ বাক্স গুলি উদ্ধার করা হয়।

 ২-৬-৭১ বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ডাকাত ও দুস্কৃতকারীদের নিকট থেকে মোট ১১টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ২৩-৬-৭১ ভালুকা থানার পোনাশাইল এলাকার একদল মুক্তিসেনা টহল দেওয়াকালীন সময়ে একখানা সন্দেহজনক নৌকা আটক করা হয়। উক্ত নৌকা তল্লাশী করে ৫টি রাইফেল ও ৪ বাক্স গুলিসহ ৫ জন পুলিশ ধরা হয়। উক্ত পুলিশের নিকট থেকে অনেক গোপন তথ্য জানা সম্ভব হয়। তারা মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

 ২৫-৬-৭১ পনের শতাধিক পাক সেনার একটি দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ভালুকা ঘাঁটি করার উদ্দেশ্যে গফরগাঁও থেকে ভালুকা রওয়ানা হয়। পাক সেনাদের এই সুসজ্জিত বাহিনী ভালুকা যাওয়ার সময় অধিনায়ক আফছার সাহেব ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সকাল ৮ ঘটিকায় ভাওয়ালিয়া বাজু বাজারের ঘাটে তাদের রাস্তা রোধ করেন এবং যুদ্ধ শুরু হয়। পাকসেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিসেনারা মাত্র ২ টি,এল,এম,জি (হালকা মেশিনগান) ও ৩৭ টি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধে শুরু করেন। অবিরাম ৩৫ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী অগ্রসর হতে না পারায় মুক্তিসেনাদের পিছন দিকে পাক সেনাদের সাহায্যের জন্য হেলিকপ্টার দ্বারা কয়েকবারে ৩ শতাধিক পাকসেনা আবতরণ করানো হয়। এই যুদ্ধ মোট ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে ১৯৫ জন পাকসেনা নিহত ও বহুসখ্যক আহত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিসেনা আঃ মান্নান শহীদ হন এবং ৩জন মুক্তিসেনা আহত হন। ২৮-৬-৭১- অধিনায়ক আফছারউদ্দিন সাহেব নিজেই রাত্রি ৩ ঘটিকায় ভালুকা থানায় গ্রেনেড আক্রমণ চালিয়ে ১৭ জন পাকসেনাকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

 ১৭-৭-৭১ মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার দেউলপাড়া এলাকায় পাক সেনাদের একটি টহলদারী ট্রেনের উপর মুক্তিসেনারা আক্রমণ চালায়। ফলে ৭ জন পাক সেনা নিহত ও