পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৯

নেতৃত্বে বান্দিয়া এলাকায় ৪ ঘণ্টা যাবৎ পাকবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় হয়। ফলে ১২ জন রাজকার নিহত হয়। ১৯-৯-৭১- ভালুকা থানার রাজৈ গ্রাম এলাকয় পাকবাহিনী লুট করতে আসলে কোম্পানী কমাণ্ডার চাঁন মিয়া তার দল নিয়ে আক্রমণ করেন। ফলে ৭জন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। ২ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। একই দিন ভালুকা থানার পোনাশাইল এলাকায় কোম্পানী কমাণ্ডার চাঁন মিয়ার একটি প্লাটুনের সহিত একদল রাজাকার ও পাকসেনাদের এক ঘণ্টাকাল গুলি বিনিময় হয়। এই যুদ্ধে ২জন পাকসেনা নিহত হয়।

 ২১-৯-৭১- এই দিন সকাল ৯ ঘটিকায় ভালুকা ঘাঁটি থেকে প্রায় চার শতাধিক রাজাকার ও পাক বাহিনীর একটি দল ৪ ভাগ হয়ে বড়াইদ এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রড়াইদ গ্রামে আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী হেডকোয়ার্টার ছিল। পাকবাহিনীর আসার খবর পেয়ে কোম্পানী কমাণ্ডার মোমতাজউদ্দিন খান, প্লাটুন কমাণ্ডার সামছ উদ্দিন, মনির উদ্দিন, মোঃ মোতালিব মাস্টার ও হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর ৪টি রাস্তা প্রতিরোধ করেন। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পাকবাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৪ জন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। তারা অনেক লুটের মাল ফেলে যায়। উক্ত মাল প্রকৃত মালিকদেরকে ফেরত দেওয়া হয়। ২৪-৯-৭১- পাকসেনাদের একটি দল মল্লিকবাড়ী এলাকায় লুট করতে আসলে অধিনায়ক আফছার সাহেবের দলের প্লাটুন কমাণ্ডার নাজিমউদ্দিন ও হাবিলদার আবদুল মোতালেব পাকবাহিনীর উপর আতর্কিত আক্রমণ করেন। ফলে ২ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়।

 ২৬শে সেপ্টেম্বর সন্ধায় অধিনায়ক আফছার উদ্দিন আহমেদ ওপার বাংলা থেকে মেজর পদে উন্নীত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। ২৭ তারিখ সকাল ৮ ঘটিকায় তিনি নিজে কোম্পানীর কমাণ্ডার নাজিমউদ্দিন ও তাঁর দলসহ মল্লিকবাড়ী পাক ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ফলে ৫জন পাকসেনা ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৯-৯- ৭১- রাত্রি ২ ঘটিকায় কোম্পানী কমাণ্ডার আবুল কাশেম এবং প্লাটুন মনিরুদ্দিন কয়েকজন মুক্তিসেনা নিয়ে ভালুকা ঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ চালান। ফলে ৪ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়।

 ১লা আক্টোবর ভোর ৪ ঘটিকায় ভালুকা, কাশীগঞ্জ ও ত্রিশাল থেকে পাকবাহিনীর তিনটি দল একযোগে বাইন্দা ও বড়াইদ এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কোম্পানী কমাণ্ডার কাশেম সাহেবের নেতৃত্বে কমাণ্ডার কছিম উদ্দিন, মনির উদ্দিন ও হাফিজুর রহমান তাদের পথ রোধ করেন। ১৭ ঘণ্টাকাল স্থায়ী এই যুদ্ধে মোট ৭১ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। ৩রা অক্টোবর মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি থেকে পাকবাহিনীর একটি দল ভালুকা থানার তালাব এলাকায় লুট করার সময় অধিনায়ক আফছার সাহেব ও কোম্পানী কমাণ্ডার মোমতাজ উদ্দিন খান একদল মুক্তিসেনাসহ ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে ৪জন পাকসেনা ও ২২ জন রাজাকার নিহত এবং ৩জন আহত হয়। ৫-১০-৭১- ভালুকা ঘাঁটি হতে পাকবাহিনীর একটি দল বিরুনিয়া ও মেদিলা গ্রাম লুট করতে আসলে কোম্পানী কমাণ্ডার মোমতাজউদ্দিন গ্রামের পরিচালনায় প্লাটুন কমাণ্ডার মজিবুর রহমান ও মোঃ নুরুল ইসলাম পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ২ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর ৯ জন রাজাকার নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

 ৭ অক্টোবর মেজর আফছার সাহেব স্বয়ং একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাত্রি ৮-৪৫ মিনিটে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ২ ঘণ্টাকাল গুলি বিনিময়ের পর ১৯ জন পাকসেনা ও ১৪ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। পরদিন পাকবাহিনীর একটি দল পোনাশাইল এলাকার বাগেরপাড়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে মুক্তিসেনারা আতর্কিত আক্রমণ চালায়। ফলে ৮ জন রাজাকার নিহত ও ৩জন রাজাকার আহত হয়। এই দিন কোম্পানী কমাণ্ডার চাঁন মিয়া তার দল নিয়ে গফরগাঁও থানার এক রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৪টি রাইফেল এবং ১২ শত রাউণ্ড গুলী উদ্ধার করেন এবং ৯ জন রাজাকার নিহত কয়েকজন আহত হয়। ৯-১০-৭১- কোম্পানী কমাণ্ডার হাকিম সাহেব তাঁর কোম্পানীর প্লাটুন কমাণ্ডার দিলদার আহমেদ, শ্রীনারায়ণচন্দ্র পাল ও তমিজউদ্দিন আহমেদ এবং ৯০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর ঘাঁটি আক্রমণ করেন।