পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৭২

মুক্তিযোদ্ধারা আতর্কিত আক্রমণ করেন। এই হামলায় ২৭ হস পাকসেনা নিহত ও ৪ জন গুরুতররুপে আহত হয়, ৩ টি ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ৭-১২-৭১- মেজর আফছার সাহেব ও কোম্পানী কমাণ্ডার ফজলুল ওয়াহাব তিনটি কোম্পানীসহ পাকসৈন্যের ভালুকা ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ২ জন পাকসেনা ও ৩০ জন রাজাকার নিহত হয়। ৩০ ঘণ্টাকাল যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ভালুকা ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ৮ ডিসেম্বর পলায়নরত পাকফৌজের পিছু ধাওয়া করে মেজর আফছার ও কোম্পানী কমাণ্ডার ফজলুল ওয়াহাব গফরগাঁও থানার ভারইল গ্রামের নিকটবর্তী স্থানে পাক সেনাদেরকে ঘেরাও এবং আক্রমণ করেন। তিনজন পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। পরের দিন মেজর আফছার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গফরগাঁও থানা হেডকোয়ার্টার দখল করেন এবং অনেক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেন।

 ১০-১২-৭১- গফরগাঁও থানার নতুন অফিস ইন-চার্জ হাফিজুর রহমান, কোম্পানী কমাণ্ডার ফজলুল ওয়াহাব, কোম্পানী কমাণ্ডার নাজিমউদ্দিন খান ও প্লাটুন কমাণ্ডার আবদুল বারী মাস্টার সাহেবের নেতৃত্বে ত্রিশালে পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। পাকসেনারা রাজাকারদের সাথে ছলনা করে পালিয়ে যায়। রাজাকররা অন্য উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে ১০৬ টি রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশাল ঘাঁটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ১৪-১২-৭১- ময়মনসিংহ শহর থেকে পলায়নরত প্রায় ১০০ জন পাকসেনারা একটি দল ভালুকা থানার পাড়াগাঁও এলাকার এক গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। মেজর আফছার সাহেবের তৃতীয় ছেলে সেকশন কমাণ্ডার নাজিমউদ্দিন কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা উক্ত পাকসেনাদেরকে আক্রমণ করে। ২ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধের পর নাজিমউদ্দিন আহত হয়।

 ১৫ ডিসেম্বর- মেজর আফছার উদ্দিন তাঁর দলের কোম্পানী কমাণ্ডার কুদ্দুছ খান, গিয়াসউদ্দিন ও কোম্পানী কমাণ্ডার নাজিমউদ্দিনের সাঙ্গে মিলিত হয়ে আক্রমণ করেন উক্ত পলায়নরত পাকবাহিনীকে। মেজর সাহেব পাকবাহিনীর ওপর তুমুল আক্রমণ চালিয়ে ৪০ জনকে হত্যা করেন এবং ১৮ জনকে অস্ত্রশস্ত্রসহ জীবন্ত ধরে ফেলেন। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ১৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা পৌঁছেন। কুরমীটোলা ঘাঁটির নিকট পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য মারা যায়। বাকী মৃত সৈন্যদেরকে নিয়ে মেজর আফছার ক্যাণ্টনমেণ্টে পৌঁছতে সক্ষম হন।

 আফছার ব্যাটালিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাঃ অধিনায়ক - মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ; সহকারী অধিনায়ক- মোমতাজউদ্দিন খান (শহীদ); নাজিমউদ্দিন (শহীদ); আবদুল হাকিম; আবুল কাশেম এবং হাফিজুর রহমান। এডজুট্যাণ্ট- এ, এম এম মোছলেহউদ্দিন আহমেদ বি,এ; সিকিউরিটি অফিসার- মোঃ আখতার হোসাইন মণ্ডল; সহ-সিকিউরিটি অফিসার- মোঃ আঃ হামিদ (গফরগাঁও), কোয়াটার মাস্টার - ডাঃ হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও এ, কে, এম আছাদুজ্জামান; মোঃ মোছলেহ উদ্দিন (ডাকাতিয়া) ও নুরুল আমিন, মোঃ ফজলুল হক বেগ ও এস,এস ওমর আলী, মোঃ আবদুল গফুর মাস্টার ও মোছলেহ উদ্দিন (রসুলপুর) এবং মোঃ আবদুল মোতালিব; সুবেদার মেজর - সুলতান আহমেদ; অফিস-ইন-চার্জ- মোঃ হাফিজুর রহমান; জে, সি, ও এডজুট্যাণ্ট- মোঃ আঃ মোতালেব হাবিলদার; একাউণ্ট ক্লার্ক- মোঃ আবুল কাশেম; সহকারী ক্লার্ক-মোঃ নূরুল আমীন; ডিসপাচ ক্লার্ক- মোঃ আব্দুল খালেক; সহকারী ক্লর্ক- মোঃ শাহজাহান চৌধুরী; ষ্টেট ক্লার্ক- মোঃ জামালউদ্দিন; সহকারী ক্লার্ক- মোঃ আলী আকবর; রেকর্ড ক্লার্ক এফ, এম আবুল কাশেম; সহকারী ক্লার্ক - নুরুল হুদা চৌধুরী (দুলু); বি, এইচ, এম- মোঃ আবুল কাশেম (বখুরা) গফুরগাঁও; অডিটর মোঃ আঃ সবুর, বি, কম।

 উপদেষ্টা পরিষদঃ ১। মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ, অধিনায়ক; ২। ডাঃ ওয়াইজউদ্দিন আহমেদ, মেডিক্যাল অফিসার; ৩। মোঃ হাফিজুর রহমান, অফিস-ইন-চার্জ, ৪। মোঃ আবদুল হাকিম, কোম্পানী কমাণ্ডার; ৫। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ; সাম্পাদক ‘জাগ্রত বাংলা', ৬। আখতার হোসাইন মণ্ডল, সিকিউরিটি অফিসার, ৭। মোঃ ফজলুল হক বেগ, কোম্পানী কমাণ্ডার, ৮। মোঃ আবদুল জলিল, কোয়াটার মাস্টার; ৯। মোঃ আনছারউদ্দিন মাস্টার, কোম্পানী কমাণ্ডার; ১০। এবং মোঃ ফজলুল ওয়াহাব।