পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৮৬

জনাব নজরুল ইসলাম (পরবর্তীতে শহীদ)। তারা ট্রান্সফর্মারগুলি কিভাবে ধ্বংস করতে হবে তার জন্য প্রয়োজনীয় ডায়াগ্রাম ইত্যাদি সরবরাহ করেছিলেন। একই সঙ্গে স্মরণ করতে হয় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সেকশন অফিসার জনাব ডাবলু আহমেদর কথা। তিনি বাংলাদেশের সমস্ত ব্রিজ আর কালভার্ট-এর ব্লুপ্রিণ্ট তাঁর অফিস থেকে গোপনে মুজিবনগর সরকারের কাছে আমার মাধ্যমে সরবরাহ করেছিলেন, পরে তিনি পাকবাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে ক্যাণ্টনমেণ্টে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। সেলিম নামের এক বোম্বাইয়া যুবকের কথাও প্রসঙ্গতঃ উল্লেখের দাবী রাখে। সে বার্মা থেকে এসে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ছিল। পাঞ্জাবীদের সাথে তার যোগাযোগ থাকায় তার মারফত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতাম। সেগুলি আমাদের অপারেশনের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল।

 হোটেল ইণ্টারকনের ওপর ১১ ই আগস্টের ২য় দফায় হামলা ছিল ক্র্যাক প্লাটুনের একটি মাস্টার পিস বিশেষ। এ অপারেশনের মূল নায়ক ছিলাম আমি এবং বাকের (পরে শহীদ)। উলফত, মায়া ও গাজী ছিল সাথে। হোটেল ইণ্টারকনের ওপর জুন মাসের হামলার পর খানসেনারা কড়া পাহারা বসিয়েছিল। সেখানে প্রবেশ করা ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার। মিঃ জামান ও ওয়ারিস নামে জনৈক বিহারীর বদৌলতে হোটেলের প্রেমিসে অবস্থিত থাই ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের নতুন অফিস কক্ষের জন্য গ্লো-সাইন তৈরীর অর্ডার সংগ্রহ করে সেই সুবাদে হোটেলে প্রবেশের সুযোগ করে নিই এবং কিভাবে অপারেশন করা যায় সে সম্বন্ধে রেকি করি। ব্যবসার নাম করে আমি সব সময় একটি ব্রীফকেস বহন করে নিয়ে যেতাম। গ্লো-সাইন তৈরীর কাজ শেষ হওয়ার পর দিনই ব্রীফকেসে ২৮ পাউণ্ড পি-কে এবং ৫৫ মিনিট মেয়াদী 'টাইম পেন্সিল' ভরে বিকেলে গাড়ীতে চেপে রওয়ানা হলাম আমি, বাকের, মায়া ও গাজী। এদের মধ্যে শেষের দু'জন গাড়ীতে স্টেনগান নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। এরপর হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ-রচিত 'বিচ্ছুদের নেপথ্য কাহিনী' শিরোনামে দৈনিক বাংলা, ১০ জানুয়ারী, ১৯৭২-এ প্রকাশিত সিরিজে* অপারেশনের অবশিষ্ট বর্ণনা হচ্ছেঃ হোটেলের লাউঞ্জে প্রবেশের জন্যে মূল দরজা দিয়ে না ঢুকে 'সুইস এয়ার'- এর অফিসকক্ষের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সামাদ ও বাকের। এ ব্যাপারে সহায়তা করলো ঐ অফিসেরই এক বন্ধু মোঃ শফি। প্রথমে সামাদ টয়লেট রুমে ঢুকলেন। খানিক পরে বাকের। ব্রীফকেস নিয়ে একবারে কোনার ল্যাট্রিনে ঢুকলো বাকের। বাক্স খুলে 'টাইম পেন্সিল' প্রেস করলো। এর আগেই ল্যাট্রিনের দরজার 'লক' করা হয়েছে, সামাদ সাহেব রয়েছেন টয়লেটের মূল দরজায় দাঁড়িয়ে 'কভার' হিসেবে। বাকের ব্রীফকেসটি রাখলো কমোডের পেছনে। তারপর দরজা তেমনি বন্ধ রেখে ল্যাট্রিনের উপর দিক দিয়ে দেয়াল টপকে বেরিয়ে এলো বাকের। তারপর প্রথমে সামাদ ও পরে বাকের হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ৫-৫৬ মিনিটে ঘটলো প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। হোটেল লাউঞ্জ, শপিং আর্কেড এবং আশেপাশের কক্ষের কাঁচ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেল, ছিটকে গেল কক্ষের দরজা, ভেঙ্গে পড়লো কক্ষের ভেতরকার এবং লাউঞ্জের লাগোয়া দেয়াল। আহত হলো বেশ কয়েকজন। বিশ্ব সংবাদপত্রসমূহে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার আরেকটি রোমাঞ্চকর সচিত্র সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হলো। প্রকাশিত এরূপ একটি সংবাদের অংশবিশেষ এখনো আমার মনে আছে। এটা ছিল, “It shows that the guerillas can move at Dacca city at their will.”

ঢাকায় গেরিলা অপারেশন-৪

সাক্ষাৎকার : নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু

 ২৫ এপ্রিল আমি সীমান্ত অতিক্রম করি। কাঠালিয়া হয়ে আগরতলা এসে পৌঁছি। সেখানে মেজর হায়দারের সাথে আমার দেখা হয়। মেজর হায়দারের সাথে আলাপ হলো। মেজর হায়দার আমাকে ঢাকা থেকে ছেলে

[১]

[২]


  1. পরবর্তীতে ঢাকায় গেরিলা অপারেশন' নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। ঢাকার গেরিলা অপারেশন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাদির জন্য বইটি দ্রষ্টব্য।
  2. মানিক বাহিনী গেরিলা ইউনিট প্রধান রেজাউল করিম মানিক হানাদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শাহাদাৎ বরণের পর তিনি উক্ত ইউনিটের অধিনায়কত্ব করেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকল্প কর্তৃক ১২-৭-৮৩ তারিখে গৃহীত।