পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩০

 আঁতকে উঠলেন মেজর জিয়া। একি? কি হতে যাচ্ছে? ঐ দিনই বিকেলে তিনি সস্ত্রীক এক সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেন ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের বাসায়। কথায় কথায় তিনি জানতে চাইলেন জেনারেল হামিদের সফরের উদ্দেশ্য। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের সে তথ্য ছিল অজানা তিনি শুধু বল্লেন, ওরা আমাকে বিশ্বাস করে না। তিনি জানালেন, জেনারেল হামিদ যখন অপারেশন রুমে ছিলেন তখন তাঁকে সে ঘরে ঢুকতেই দেয়া হয়নি।

 ঃ কি বুঝলেন? জানতে চাইলেন মেজর জিয়া।

 ঃ মনে হচ্ছে সামথিং ফিশি।

 জিয়া বল্লেন, ফিশি নয়- বিরাট কিছু। বিরাট এক চক্রান্তে মেতেছে ওরা। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার মেনে নিলেন সে কথা। পরদিন ২২শে মার্চ। রাত ১১টায় চট্টগ্রাম ই-পি-আর সেক্টর দফতরের এডজুট্যাণ্ট ক্যাপ্টেন রফিক এসে দেখা করলেন মেজর জিয়ার সাথে তিনি সরাসরি বল্লেন, সময় খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমাদের বিদ্রোহ ঘোষণা করতেই হবে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আপনি বিদ্রোহ ঘোষণা করুন। ই-পি-আরদের সাহায্য পাবেন। মেজর জিয়া তাঁকে তাঁদের পরিকল্পনার কথা জানান। ই-পি-আর এর সাহায্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। ২৫শে মার্চে ব্যাপক রদবদল ঘটে গেল ক্যাণ্টনমেণ্টের প্রশাসণ ব্যাবস্থায়।

 ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে এলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা, জেনারেল আনসারি, মেজর জেনারেল মিঠা খান, লেঃ জেনারেল খোদাদাদ খান প্রমুখ। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে তারা জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। সেই সাথে নিয়ে গেলেন মেজর আমিন আহমদ চৌধুরীকেও। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের স্থানে আনসারী নিযুক্ত হলেন ষ্টেশন কমাণ্ডার। কর্নেল শিগারী দায়িত্ব নেন ই-পি-আর এর সেক্টর কমাণ্ডার হিসেবে।

 এই রদবদলে আশংকিত হয়ে ওঠেন বাঙালী সৈনিক ও অফিসাররা। এই দিনই গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন লেঃ কর্নেল চৌধুরী।

 এদিকে চট্টগ্রাম শহরে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলছিল। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াতের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হচ্ছিল প্রবল প্রতিরোধ। অস্ত্র খালাস করে যাতে পশ্চিমা সৈন্যদের হাতে পৌঁছতে না পারে তার জন্য রাস্তায় রাস্তায় তৈরী করা হচ্ছিল ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা পরিস্কারের কাজে লাগানো হল। বাঙালী সৈন্যদের। রাত ১০টা পর্যন্ত চলল এই ব্যারিকেড সরাবার কাজ। রাত ১১টায় অফিসার কমাণ্ডিং জানজুয়া আকস্মিকভাবে মেজর জিয়ার কাছে নির্দেশ পাঠালেন এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে বন্দরে যাওয়ার জন্য। এই আকস্মিক ও রহস্য জনক নির্দেশের অর্থ তাঁর কাছে বোধগম্য হলনা। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় জানজুয়া নিজে এসে তাকে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোল শহর ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে বন্দরের দিকে রওয়ানা করে দেন কিন্তু রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে সরিয়ে যেতে তার দেরি হচ্ছিল। আগ্রাবাদে যখন একটা বড় ব্যারিকেডের সামনে বাধা পেয়ে তার ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে তখনই পেছন থেকে ছুটে আসে একটি ডজ গাড়ী ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান গাড়ী থেকে নেমেই আসেন মেজর জিয়ার কাছে হাত ধরে তাকে টানতে টানতে নিয়ে যান রাস্তার ধারে।

 ঃ পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরের বহু লোক হতাহত হয়েছে। খালেকুজ্জামানের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর থেকে কথা কয়টি ঝরে পরে। কি করবেন জিয়া ভাই, এখন? মাত্র আধ মিনিট। গভীর চিন্তায় তলিয়ে যান মেজর জিয়া তারপর বজ্যনির্ঘোষে বলেন উঠেন- উই রিভোল্ট।

 সাথে সাথে তিনি খালেকুজ্জামানকে তিনি ফিরে যেতে বলেন। বললেন, ব্যাটালিয়নকে তৈরি করার জন্য অলি আহমেদকে নির্দেশ দিতে। আর সেই সাথে নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সমস্ত পশ্চিমা অফিসারকে গ্রেফতারের।

 খালেকুজ্জামান দ্রুত ফিরে গেলেন ষোল শহরের দিকে। আর মেজর জিয়া ফিরে এলেন ট্রাকে। যে পশ্চিমা সামরিক অফিসারকে তার সাথে দেওয়া হয়েছিল, তাকে বললেন, হুকুম বদলে গেছে। বন্দতে যেতে হবে না।