পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৫

 অফিসে আসার পর ক্যাপ্টেন মোহসীন সব বুঝিয়ে দেন। এই সময় মেজর বেগ আসেন, তিনি কড়া নির্দেশ দিয়ে যান যে আজকের পরিস্থিতি খুব খারাপ। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সারারাত ডিউটি করতে হবে।

 কর্নেল এম, আর, চৌধুরীর সাথেও আমার দেখা হয়। তিনি বললেন আমি খাবার জন্য মেসে যাচ্ছি, এবং আমার কক্ষে থাকব। প্রয়োজন হলে আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করবে। তবে পরিস্থিতি খারাপ।

 রাতে শহর থেকে অনেক টেলিফোন পাই। বন্ধুবান্ধবরা পরিস্থিতি কেমন জিজ্ঞেস করছিলো। তাদেরকে বললাম যে, তারা যদি কিছু জানে তাহলে আমাকে যেন জানায়।

 রাত সাড়ে এগারটার দিকে অষ্টম বেঙ্গল থেকে মেজর মীর শওকত আলী টেলিফোনে বললেন, ইবি-আর সি-ও যত গাড়ি আছে সবগুলোই যেন তাদের জন্য সত্বর পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারণ তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এমভি-সোয়াত থেকে সত্বর অস্ত্রশস্ত্র আনলোড করতে। কিছুক্ষন পর তিনি টেলিফোনে বললেন। তার অধিনস্থ সকলে গাড়ির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

 আমি বললাম, গাড়ির জন্য খবর দেয়া হয়েছে। দু’তিন মিনিট তিনি আবার টেলিফোনে বললেন। ব্রিগেডিয়ার আনসারী তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। যদি পাঠাতে আমি দেরি করি তাহলে আমার অসুবিধা হবে।

 আমি জবাব দিলাম। গাড়ি যাচ্ছে। এই সময় চট্টগ্রাম শহর থেকে স্ট্যাণ্ডার্ড ব্যাঙ্ক-এর ভাইস চেয়ারম্যান এম, এ, কাদের আমাকে টেলিফোনে বললেন। ঢাকার কোন খবর পেয়েছেন। আমি বললাম না তিনি বললেন ঢাকায় পুলিশ ই-পি-আর এর উপর পশ্চিম পাকিস্তানীরা হামলা চালিয়েছে। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। ঢাকার বাঙ্গালী সামরিক বাহিনীর লোকেরাও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।

 টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অপারেটর সে সময়ে বাঙ্গালী ছিল, তাই কোন অসুবিধা হয়নি। আমি তাদের সবাইকে বললাম। আপনি কর্নেল এম,আর, চৌধুরীর সাথে কথা বলুন। কাদের সাহেব ও এম, আর, চৌধুরী যখন কথা বলছিলেন তখন আমি অপারেটর কে বলি তাদের কথোপকথন আমাকে মনিটর করতে।

 কথা শেষ আমি বললাম, স্যার আমি সব শুনেছি। তিনি বললেন, বাকি যতসব অস্ত্রশস্ত্র আছে সমস্ত জোয়ানদেরকে দিয়ে দিতে। তিনি সত্বর অফিসে আসছেন বলে জানালেন। আমি সুবেদার মেজর, নায়েক সুবেদার, কোয়ার্টার মাস্টার ও অন্যান্যদেরকেও ডেকে অস্ত্রশস্ত্র কোটে থেকে নিয়ে নিতে নির্দেশ দেই। তারা নির্দেশ নিয়ে বাইরে যাবার সাথে সাথে দেখতে পাই ২০-বালুচ থেকে অনেক গুলো গাড়ি আসছে। গাড়িগুলো আমাদের সামনের রাস্তা দিয়ে শহরের দিকে যেতে দেখতে পাই। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে সব গাড়ি থেমে যায়। আমি বাইরে এসে দেখতে পাই গাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর লোকজন নিচে নামছে। কোয়ার্টার গার্ড থেকে গার্ড কমাণ্ডার থেকে দৌড়ে এসে আমাকে বলে যে, ২০ বেলুচের সমস্ত লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গাড়ি থেকে নামছে। আমি তাকে বললাম তুমি চলে যাও। সে যাওয়ার সাথে সাথে কোয়ার্টার গার্ডের লোকজনকে স্ট্যাণ্ড টু সতর্ক করা হয়।

 অল্পক্ষণের মধ্যে ২০-বালুচের লোকেরা কোয়ার্টার গার্ড-এর রক্ষীদের উপর হামলা চালায়। মুহুর্তের মধ্যে চারদিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়।

 তখন হামিদ হোসেন শিগরী আমাকে টেলিফোন করে জানতে চান কোথা থেকে এ গোলাগুলি হচ্ছে বা কেন হচ্ছে। আমি বললাম, আমি কিছু জানি না। তবে বেলুচ রেজিমেণ্টের লোকেরা আমাদের লোকদের উপর গোলাগুলি ছুড়ছে। তিনি বললেন, “ডু-নট ওরি। আই উইল ট্রাই টু কনট্রোল দি সিচুয়েশন ইফ নিডেড। আই