পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৯

ই-বি-আর-সির ভেতরের অবস্থা জানতে চান। আমি উপরে বর্ণিত দু-একটি কথা বলার সাথে সাথে তাদেরকে আমার সাথে আসতে বলি। সেখানে ছিলেন মেজর রেজাউল রহমান (মেডিক্যাল স্পেশালিষ্ট) মেজর আশরাফ (রেডিওলজিষ্ট), ক্যাপ্টেন বাশার (আর্মি সাপ্লাই কোর) ও ক্যাপ্টেন মোহসীন (এডজুটট্যাণ্ট, ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্ট)।

 তাদের মধ্যে একজন বলেন, আমরা তো মনে করছিলাম। ই-বি-আর-সিতে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ফাকা আওয়াজ করেছে। জবাবে আমি বলি, এক হাজারেরও অধিক লোককে তারা বেয়নেট বুলেট ও অন্যান্য মরনাস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

 এ কথা শোনা মাত্রই মেজর রেজাউল রহমান সকলকে তৎক্ষণাৎ আমার সাথে শহরের দিকে চলে যেতে বলেন। পরিবারের সকলকে নিয়ে আমরা যাযাবারের মত শহরের দিকে রওনা হই।

 চট্টগ্রাম শহরে আসার পর দেখি শহরবাসীরা ছোট ছোট অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মারমুখী হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। আমি আমার এক আত্মীয় বাড়িতে রাত দশটায় যাই এবং সেখানে রাতযাপন করি।

 সকালে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে জনাব এম, আর সিদীকির সাথে কথা হয়। তিনি আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত ই-পি-আর এর কমাণ্ড নিতে বলেন।

 আমি কয়েকজন ছাত্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হই এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে (চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র) যাই। সেখানে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূইয়া ই-বি-আর সি ছেড়ে চলে আসলে। সে জবাবে বলে, কোন উপায় না দেখে আতুগোপন করছি। বেশী কিছু না বলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা বললাম। সে আমাকে যাওয়ার জন্য বলল। আমি বললাম, আমি কোরবানির বকরা তাই যাচ্ছি। ছাত্রদের সাথে গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। সেখানে ইপিআরদেরকে সংগঠিত করি।

 আমি ইপিআরএর লোকদেরকে যুদ্ধ করার জন্য এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় ইবিআরসির ঘটনাবলীর কথা বলাতে তারা একযোগে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাদের দৃঢ় শপথ ঘোষণা করল।

 ই-পি-আরীদের নিয়ে কোথায় কি করতে হবে পরিকল্পনা করার পর আমি পুনরায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করি। দেখা না পেয়ে বেতার কেন্দ্রে একদিনের মত কাজ করি। বাইরে যাবার পর দেখি চারদিকে লুটপাট, মারামারি চলছে। একজন ছদ্মবেশী ভূয়া ক্যাপ্টেন তার নাম নাসির। তার সাথে কোতয়ালী থানা থেকে অস্ত্রশস্ত্র বাহির করতে যাই। সেখানে প্রহরারত প্রহরীদের দেখি। নাসিরের হাবভাবে মনে হল যে সেনাবাহিনীর লোক নয়। তদুপরি থানা থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা চাওয়াতে মনে আরো সন্দেহ হয়। চট্টগ্রামে আরো দুদিন ছোটখাটো অপারেশন করার পর আমি ফেনীর পথে রওনা হই এবং ফেনী, নোয়াখালী, মাইজদী, লাকসাম, কুমিল্লার মিয়ার বাজার, চৌদ্দগ্রাম এলাকার সেক্টর কমাণ্ডারের দায়িত্ব নেই। ফেনীতে হেডকোয়ার্টার ছিল। পুলিশ ইপিআর, আর্মি মুজাহিদ ইউ-ওটি সি ও ছাত্রদেরকে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হই। সেখানে জনাব খাজা আহমদ, জনাব জরুহুল কাইয়ূম এম-সি-এ কে ভারত থেকে আমাদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করতে অনুরোধ করি। তারা তাদের চেষ্টা চালান। দুদিন পর বেলুনিয়ার এসডিও ও বি-এস-এফ কমাণ্ডারের সাথে আমাদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে জনাব খাজা আহমদ, জনাব জহুরুল কাইয়ুম, জনাব আবুদর রশিদ, এম সি এ উপস্থিত ছিলেন। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন তাদেরকে জানাই এবং বিএসএফ কমাণ্ডার সবকিছু দিতে স্বীকার করেন।