পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৭৫

আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমার বক্তব্যের পর মিজান চৌধুরী ও শেখ মনি ছাড়া উপস্থিত প্রায় সকলে তাদের পূর্বের মনোভাব পরিবর্তন করেন।

 কামরুজ্জামান ভাই আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, শেখ মনির কথানুযায়ী বিপ্লবী পরিষদ গঠন করা যায় কিনা। আমি তাকে বললাম, তা করা হলে যুদ্ধ বিপন্ন হবে। তিনি আমার কথার আর কোন প্রতিবাদ করলেন না। আমি তাকে বলি তার সাথে দেখা করে আমি বিস্তারিত সব কিছু বলবো।

 সভার শেষ পর্যায়ে তাজউদ্দিন ভাই বক্তৃতা দেন। উপস্থিত সকলে সরকার গঠন করার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য মেনে নিলেন।

 ১০ই এপ্রিল বিভিন্ন অঞ্চল সফরের জন্য আমাদের বের হবার কথা রয়েছে। একটি ছোট্ট বিমানের ব্যবস্থা করা হলো। বিমানটি খুব নিচু দিয়ে উড়তে পারে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করাই এই সফরের উদ্দেশ্য। মনসুর ভাই, কামরুজ্জামান ভাই ও তোফায়েল আহমেদ একই বিমানে আমাদের সাথে যাবেন।

 পরদিন খুব ভোরে গাজা পার্কের বাড়ীতে কামরুজ্জামান ভাই-এর সাথে দেখা করে তাঁকে বিস্তারিত সব কিছু অবহিত করি।

 তাঁর সাথে বলতে গেলে আমার আত্মিক যোগাযোগ ছিল। তিনি প্রাণখোলা সহজ-সরল মানুষ। দু’জনে একান্তে প্রায় আধ ঘণ্টা আলোচনা করি। আলোচনার মাধ্যমে তাঁর মনের জমাট মান অভিমান দূরীভূত হয়ে গেল। বিপ্লবী পরিষদ গঠনের জন্য যুবকদের প্রস্তাব যে অযৌক্তিক ও অবাস্তব এবং এটা যে যুদ্ধের সহায়ক হবে না তাও তিনি মেনে নিলেন।

 তাজউদ্দিন ভাই-এর অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে তার আর কোন আপত্তি রইলো না। আমাদের সাথে বিমানে আগরতলা যাওয়ার জন্য কামরুজ্জামান ভাইকে বললাম। তিনি বলেন, যাওয়ার ব্যাপারে তার কোন আপত্তি ছিল না। তিনি খবর পেয়েছেন, তার পরিবার পরিজন কোলকাতার পথে দেশ ত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে তার এখানে থাকা প্রয়োজন। আমি খুশি মনে বিদায় নেই।

 ১০ই এপ্রিল। বিমানে আমাদের আগরতলা রওয়ানা হওয়ার কথা। তাজউদ্দিন ভাই, মনসুর ভাই, শেখ মনি, তোফায়েল আহমেদ ও আমি লর্ড সিনহা রোড থেকে সোজা বিমানবন্দরে যাই। অন্যান্যের মধ্যে মিঃ নগেন্দ্র সিং আমাদের সঙ্গী হলেন। বিমানটি খুবই ছোট। এতে বসার মত ৫/৬টি আসন ছিল।

 খুব নিচু দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তৈরি অব্যবহৃত বিমানবন্দর বমলার কয়েকটিতে আমরা নামি। এগুলো বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি।

 ছোট ছোট বন্দরগলো বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি। একটি বিমান বন্দরে আমরা দুপুরের খাবার খাই। বিএসএফ-এর মাধ্যমে খবর দেয়া হলো কোন আওয়ামী লীগ নেতার খোঁজ পেলে পরবর্তী কোন বিমানবন্দরে তৈরি রাখতে।

 উত্তর বঙ্গ তথা রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা অঞ্চলের কোন নেতা খুঁজে পাওয়া গেল না। এদের বেশীর ভাগ কোলকাতা এসে গেছেন। কিছুক্ষণ পর আমরা বাগডোগরা বিমান বন্দরে নামি। সেখান থেকে জীপে করে করে শিলিগুড়ি যাই। শহর থেকে অনেক ভেতরে সীমান্তের খুব কাছাকাছি একটি বাংলোতে উঠলাম। গোলক মজুমদার এখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী অনুয়ায়ী এখানের কোন একটি জঙ্গল থেকে গোপন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে তাজউদ্দিন ভাই-এর বক্তৃতা প্রচারিত হবে।