পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১০৭

বোষ্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুস্তাভ পাপানেক কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার সাথে প্রাথমিক আলোচনার জন্যে তাজউদ্দিন ভাই আমাকে প্রেরণ করেন। একটি হোটেলে তার সাথে আমি দেখা করতে যাই। তার সাথে আমার কোন পূর্ব পরিচয় নেই। পাপানেক বলেন, সি আই এ বাংলাদেশ আন্দোলনের পক্ষে নয়। হোয়াইট হাউজের মত পাল্টাতে হলে আগে সি আই এ’র মত পাল্টাতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রয়োজন। মার্কিন প্রশাসন, বিশেষ করে সি আই এ’র মত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উত্তরে আমি জানাই, একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কোন আলোচনা হতে পারে না, তেমনি এর প্রয়োজনীয়তাও আমি বুঝতে পারি না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন খোলামেলা ব্যাপার। এর মধ্যে কোন আতাঁত বা ষড়যন্ত্রের চিহ্ন নেই। তাছাড়া সি আই এ’র মত একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা এই আন্দোলনের সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বন্ধুরা আমাদের পক্ষে কাজ করছেন। তাদের কোন বক্তব্য থাকলে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে খোলাখুলি উত্তর পেতে পারেন।

 পাপানেকের প্রস্তাব নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। তবু প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে তাকে চূড়ান্ত কথা জানাবার প্রতিশ্রুতি দেই। তাঁর প্রস্তাব শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফর বা সি আই এ’র সাথে সাক্ষাৎ কোনটাতেই তিনি রাজী নন। আমি প্রধানমন্ত্রীর জবাব পাপানেককে জানাই। আমার জানা মতে বিদেশী ব্যক্তিদের মধ্যে একমাত্র পাপানেকের সাথেই প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেননি। প্রফেসর রেহমান সোবহান যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পক্ষে কাজ করেন।

 বৃটেনের লেবার পার্টি নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী পিটার শোর কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। বৃটিশ জনমত গড়তে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। শোর- এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত, মানবিক দিক, বাস্তহারা সমস্যা ইত্যাদি আলোচনা করা হয়। এই সাক্ষাৎকালে ডোনাল্ড ও আমি উপস্থিত ছিলাম। শোর ও ডোনাল্ড উভয়েই প্রধানমন্ত্রীকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। পরে শোর সাংবাদিক সম্মেলনে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তার বক্তব্য বৃটেন ও ভারতে বিশেষভাবে প্রচারিত হয়।

 বৃটিশ এম পি মাইকেল বার্নস-এর সাথে দেখা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। স্থানটা ছিল ২৪ পরগণা পার হয়ে বাংলার মাটিতে। তিনটি টুল ছিল। এগুলো অনায়াসে হাতে করে বহন করা যায়। পাশে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্যে সামরিক টেলিফোন সেট। কিছু দূরে নদীর ওপার থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসছে। এমনি করে টাইমস পত্রিকার নামী সাংবাদিক হেজেল হার্ষ্টস-এর সাথেও সাক্ষাৎ হয়।

 সেপ্টেম্বর মাসের শেষাশেষি আমাদের সুখবর আসতে থাকে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যের খবর আসতে থাকে। আন্তর্জাতিক ভাবেও আমাদের সমর্থন বৃদ্ধি পায়। আঁদ্রে মালরো থেকে শুরু করে তরুণ বিটল এবং ইহুদি মেনহুইন থেকে রবিশংকর, কৃশকায় পপসিঙ্গার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেন।

 এছাড়া বাংলাদেশের ওপর গান রচনা ও রেকর্ড হয়ে আসছে। বিদেশী বন্ধুরা টাই পরে এসেছেন, তাতে বাংলাদেশের ছবি। বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর মানুষের অন্তরে।

 ইতিমধ্যে নানা রকমের পরিকল্পনা এসেছে। ভারত বিরাট ও ব্যাপক দেশ। নানা ধর্ম ও বর্ণের লোক এখানে বাস করে। ভারতের সরকারও একটি বৈচিত্রময় সরকার। মিসেস গান্ধী তার নিজস্ব পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন। অটল বিশ্বাস নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে মিসেস গান্ধীর কাছে বহু প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো তিনি কিভাবে দেখেছেন, তা তিনিই জানেন। কিন্তু আমরা দূর থেকে যা বুঝেছি, দিল্লী থেকে বিভিন্ন এজেন্সী কাজ করতো। ভারতীয় বিশেষ মন্ত্রণালয় কলকাতায় অফিস খোলে। মিঃ রায় ও মিস অরুন্ধতী এ অফিসের কর্মকর্তা ছিলেন। অপর একটি এজেন্সী ছিল ‘র’। এর পক্ষে থেকে লিয়াজোঁ