পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২০৩

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড ইসলাম ঐ সময় দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও অন্যান্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সংগে কয়েকদফা উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বসেন এবং পরে পরস্পরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে চুক্তিতে উপনীত হন।

 যখন ভারত সরকার ১৯৭১ সনের নভেম্বর মাসের মধ্যেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেন না তখন অনেকের মধ্যেই হতাশা ও বেদনার সুর লক্ষ্য করেছি। তারপর ৬ই ডিসেম্বর সত্য সত্যই যখন ভারত সর্ব প্রথম বাংলাদেশ স্বীকৃতি দান করে তখন আমরা সবাই আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়ি।

 এরপর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৬ ডিসেম্বর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটা উচ্চ পর্যায়ের জরুরী বৈঠক ঢাকা হয় সকাল ১০ টায়, কলকাতাতে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন একজন ঊর্ধ্বতন সিনিয়র সিভিল সার্ভেণ্ট মিঃ আর গুপ্ত। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের বহু ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সর্বজনাব রুহুল কুদ্দুস, নূরুল কাদের খান, খন্দকার আসাদুজ্জামান, আমি নিজে এবং আরও কয়েকজন। সভা চলাকালীন আনুমানিক বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ বৈঠক কক্ষের টেলিফোনটি বেজে উঠলো।

 মিঃ গুপ্ত টেলিফোনটি ধরলেন এবং সবার সামনে টেলিফোনের বার্তা জানিয়ে দিলেন-বললেন, আপনাদের জন্য শুভ সংবাদ, পাক বাহিনী আত্মসমর্পন করেছে। এ সংবাদে আমরা সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। এই পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশ গিয়ে কি কার্যক্রম গ্রহণ করব সেই বিষয় নিয়ে অল্প কিছু সময় আলোচনার পর বৈঠক সমাপ্ত হয়।

 এই বৈঠকের পরপরই আমরা তৎকালীন প্রধানন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবের সংগে সচিবালয়ে তাঁর কক্ষে গিয়ে মিলিত হই। আমাদের পক্ষে পাক আর্মির আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য কাকে ঢাকায় পাঠানো যায় এই নিয়ে জল্পনা হলো। আমাদের মধ্যে থেকে একজন বলেন উঠলেন, 'স্যার, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনারই উপস্থিত থাকা উচিত। পরে সিদ্ধান্ত হল সেনাবাহিনীর এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমাদের পক্ষে উপস্থিত থাকা উচিত একজন মিলিটারী অফিসারের। তখন জেনারেল ওসমানীকে পাঠানোর কথা উঠলো। কিন্তু তিনি যে তখন কলকাতার বাইরে। তৎক্ষণাৎ আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেকেণ্ড-ইনকমাণ্ড জনাব এ কে খন্দকার এয়ারভাইস মার্শাল সাহেব বলে উঠলেন, “স্যার আমি প্রস্তুত আছি'।

 তারপর তাঁকেই দুপুরের এক বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠান হলে আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য।

 ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৭১। ভারতীয় একটি বিমানযোগে আমাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ-এর স্ত্রী জহুরা তাজউদ্দিন ও অন্যান্যসহ আমি দমদম বিমানবন্দর থেকে বহু আকাঙ্খিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী অভিমুখে রওয়ানা হলাম।

 ১লা জানুয়ারী ১৯৭২ সনে আমি ঢাকায় এসে সচিবের মর্যাদায় বাংলাদেশের রিলিফ কমিশনার হিসেবেই কাজে যোগদান করি।

 মুজিব নগর সচিবালয়ে যাঁরা মুখ্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তাঁদের প্রধান কয়েকজনের নাম হলোঃ

 জনাব নূরুল কাদের খান, সেক্রেটারী জেনারেল, এডমিনিস্ট্রেশন; জনাব খন্দকার আসাদুজ্জামান; সচিব, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র (ইণ্টিরিয়ার) মন্ত্রণালয়, বাবু জয় গোবিন্দ ভৌমিক, রিলিফ কমিশনার; জনাব আবদুস সামাদ, সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; জনাব তৌফিক ইমাম; সচিব, মন্ত্রী পরিষদ; জনাব ড. টি হোসেন, সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; জনাব হান্নান চৌধুরী, সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; জনাব আবদুল খালেক, পুলিশের আই,জি;