পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২০৬

 শরণার্থীগণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অঞ্চল হতে এই অঞ্চল দিয়ে অতি সহজেই স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বনাঞ্চলে এবং গ্রামে, আশ্রয় নিতে আরম্ভ করে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ত্রিপুরা রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান, রাস্তা-ঘাটের দুর্গমতা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সুযোগসুবিধা মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদেরকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় এই অঞ্চলে আগমন করতে উৎসাহিত করেছিল। তাই যুদ্ধ আরম্ভ হবার অব্যবহতি পরে অর্থাৎ ১৯৭১ সনের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতেই পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন লিবারেশন কাউন্সিল ভারত সরকারের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে শরণার্থীদের জন্য আশ্রয় শিবির স্থাপন করার সাথে সাথে বাংলাদেশের ভেতর হতে আগত বিভিন্ন পর্যায়ের অস্ত্র প্রশিক্ষণার্থী লক্ষ লক্ষ যুবকের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যুবক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক যুবকের জন্য ৩ ধরনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। অভ্যর্থনা কেন্দ্র (Reception Camp)
২। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Youth Training Camp)
৩। সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Army Training Camp)

 মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক এবং প্রশিক্ষণার্থী বিভিন্ন শ্রেণীর যুবকদের মধ্যে যে সব যুবক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেনি বা সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুকও নয়, সে সব যুবককে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে, যুদ্ধ চলাকালে এবং পরবর্তীকালে যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ গড়ার সৈনিকরূপে ‘ভিত্তি ফৌজ' হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে, একটি স্কীম প্রণয়নের দায়িত্ব তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিলঃ

 জনাব ড. হাবিবুর রহমান ওরফে ড. আবু ইউসুফ, জনাব মাহবুব আলম, জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর, অধ্যাপক দেবব্রত দত্ত গুপ্ত।

 উপরোক্ত এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন ড. হাবিবুর রহমান। ড. রহমান স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালে তিতাস গ্যাসের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের গ্যাস, অয়েল ও মিনারেল রিসোর্সের ১৯৭৫ সন পর্যন্ত চেয়ারম্যান এবং সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনাব মাহবুব আলম যুদ্ধের সময় পররাষ্ট্র সচিব এবং পরবর্তীকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ সচিব, স্বনির্ভর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনাব ঠাকুর যুদ্ধের সময় এম, এন, এ এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন পরিচালক ছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও বেতার দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।

 যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে পরিচালনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (মুজিব নগর) একটি ‘ইয়থ ট্রেনিং কণ্ট্রোল বোর্ড' গঠন করেছিলেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মুজিবনগর, পূর্বাঞ্চল (ত্রিপুরা রাজ্যকেন্দ্রিক) ও পশ্চিমাঞ্চলের (পশ্চিম বঙ্গকেন্দ্রিক) এই দুইটি ইয়থ ক্যাম্প ডাইরেকটরেট গঠন করা হয়েছিল। তবে, এই সময়ের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন কারণে তেমন ‘শক্ত’ এবং ‘মজবুত’ হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। পশ্চিম অঞ্চলের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জনাব আহমদ রেজা।

 ইয়থ ট্রেনিং ক্যাম্পগুলোর দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিম্নে উল্লেখিত পদগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিলঃ


  • ডঃ হাবিবুর রহমান, যুদ্ধের সময় ডঃ আবু ইউসুফ, এই ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।