পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২২৭

তেতুইয়া, তেমোহনী ও আবুর হাটের যুদ্ধ (অক্টোবর)

 পাক বাহিনী উপরোক্ত মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সেণ্টার আক্রমণ করে। এ যুদ্ধ প্রায় দু'দিন স্থায়ী হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রধান যুদ্ধকেন্দ্র মাতার হাট পর্যন্ত আক্রান্ত হয়। প্রধান গেরিলা সেণ্টার ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পিছু হটে যেতে হয়েছিল। পরে প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তান বাহিনী মাতার হাট ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোক আহত ও নিহত হয়।

 আবুর হাটে একজন সাধারণ পানের দোকানী দেশ স্বাধীন করার অদম্য এক ইচ্ছার নজির স্থাপন করেছেন। পাক বাহিনী বাংলাদেশে হানা দেয়ার প্রথম দিকে আবুর হাটের দিকে সতে শুরু করলে লোকজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে আরম্ভ করে। কিন্তু উক্ত দোকানদার তফাজ্জল হোসেন পাক সেনাদের সম্মুখে গিয়ে কয়েকটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। গ্রেনেড লক্ষ্যবস্তুতে না পড়লে কয়েকজন পাকসৈন্য আহত হয়।

 ২৬ শে মার্চ পাক বাহিনী যখন চট্টগ্রামের দিকে আসছিল তখন তারা রাস্তার দু'পাশের বাড়ীঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বড় তাকিয়া বাজারে উপস্থিত হয়ে পাক বাহিনী লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় এক সাহসী যুবক দা ও লাঠি নিয়ে একজন পাকসেনাকে আক্রমণ করে। তারপর পাকসেনারা তাকে ধরে ফেলে এবং হত্যা করে।

 চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসরমান পাক বাহিনী সীতাকুণ্ডে পৌঁছেই লোহাগাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। ১০/১২ জন পাক সৈন্য একটা মেয়েকে ধরে আনে এবং একটা পুকুর পাড়ে এনে উপর্যুপুরি ধর্ষণ করে। মেয়েটি কয়েকদিন মাত্র জীবিত ছিল, তারপর সে মারা যায়।

মোশাররফ হোসেন
গণপরিষদ সদস্য
(সাবেক এম, পি, এ চট্টগ্রাম)
১২ জুন, ১৯৭৩।


মোহাম্মদ আজিজুর রহমান

২৪শে মার্চ আমি ঠাকুরগাঁও দিনাজপুরের ইপিআর বাহিনীর কয়েকজন সুবেদার ও হাবিলদারের সঙ্গে গোপনে আলাপ করি এবং তাদের উপদেশ দেই পাক অফিসাররা তাদের অস্ত্র জমা দিতে তারা যেনো অস্ত্রগার দখল করে নেন। এতে তারা রাজী হন। দিনাজপুর ইপিআর বাহিনীর একজন সুবেদার যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বেই অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং পাক সৈন্য দের হত্যার জন্য আমার এবং জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী অধ্যাপক ইউসুফ আলীর কাছে অনুমতি চান। কিন্তু আমরা তার এ প্রস্তাবে রাজী হইনি। ২৫শে মার্চ রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ এবং অবাঙ্গালী বিহারীদের মধ্যে মিটিং হয়। এই মিটিং-এ বিহারীরা শান্তিরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং বিহারী বাঙ্গালী ভাই ভাই প্রভৃতি শ্লোগান দেয়। ২৫শে মার্চের মধ্যরাতেই আমরা গুলির শব্দ মুনতে পাই। চারদিক থেকে ‘জয় বাংলা'র প্রভৃতির শ্লোগান ও কানে ভেসে আসে। ভোর পর্যন্ত এ রকম ধ্বনি শুনতে পাই।২৬ মার্চ সকালে ফজরের নামাজান্তে আমার বাসার সামনে একটি হালকা কামান বসানো দেখতে পাই। পাঞ্জাবী সামরিক কর্মকর্তা আমাদের ডেকে নিয়ে যান এবং তাদের কথামতো কাজ করতে চাপ দেন। তারা আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাদের কথা না শুনলে যে কোন দণ্ড তারা দিতে পারেন। এখান থেকে বাসায় না গিয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায় চলে যাই। ইতিমধ্যে শহরে কারফিউ জারি হয়ে গেছে। ২৭ শে মার্চ সকালে দু'ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নেয়া হয়। এ সুযোগে আমি বেরিয়ে পড়ি এবং ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থির হয় দিনাজপুর ইপিআর ৮ম বাহিনীর বাঙ্গালীদের দায়িত্বে