পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
২৫৯

 এসব বক্তব্যের বিপক্ষে এবং আমাদের স্বপক্ষে কোন লেখা ছাপা হচ্ছে না দেখে এ প্রচারণার একটি যথাযোগ্য প্রত্যুত্তর দেবার সিদ্ধান্ত নেই এবং ‘In Defense of Mujib' শীর্ষক একটি দীর্ঘ পত্র লিখে এ পত্রিকার জাঁদরেল সম্পাদক মিঃ বি জি ভার্গিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। স্বাধীনচেতা এ সাংবাদিক সরকারী মতামতেরও খুব একটা তোয়াক্কা করতেন না। আমি তাঁকে বলি আপনার পত্রিকায় আমাদের বেশ সমালোচনা করা হচ্ছে কিন্তু আমাদের স্বপক্ষে কিছুই দেখছি না। এই বলে ব্রীফকেস খুলে আমার টাইপ করা চিঠিটা তাঁর হাতে দেই। তিনি মনোযোগ দিয়ে চিঠিটি পড়েন। আমি চিঠিটি শেষ করেছিলাম ‘Joy Bangabandhu! Joy Bangla!!' দিয়ে। তিনি বলেন, ‘এ দু'টো বাদ দিতে হবে, এগুলো শ্লোগান। আমি বলি প্রথমটি বাদ দিতে পারেন তবে দ্বিতীয়টি রাখতে হবে, কারন ‘Joy Bangla’ আমাদের জাতীয় শ্লোগান। তিনি আমাকে প্রথম শ্লোগানটি বাদে বাকী চিঠিটা হুবহু ছেপে দেবেন বলে জানান।

 মিঃ ভার্গিজের কাছে যুক্তি সহকারে আমাদের সংগ্রামের কারণগুলোও ব্যাখ্যা করি। এরপরে তার পত্রিকার কলামে বাংলাদেশ বিরোধী বিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়। ১০ মে তারিখে আমার চিঠিটি চাপা হয়, ১৩ মে আমাদেরকে সমর্থন এবং পাকিস্তানপন্থীদের নিন্দা করে একসাথে ৫টি চিঠি ছাপা হয় এবং ১৫ মে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হাবিবুল্লাহ এবং দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের প্রফেসর কে এ ফারুকীর পাকিস্তানীদের নিন্দা এবং আমাদের আন্দোলন ও নেতাকে সমর্থন করে লিখিত ২টি চিঠি প্রাকাশের মধ্য দিয়ে প্রভাবশলী Hindustan Times এর পাতায় পাকিস্তানপন্থীদের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার প্রচেষ্টার শোচনীয় পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রফেসর ফারুকী পাকিস্তানী বাহিনীকে তৈমুর, চেংগীস ও হালাকু খানের মত বর্বর বলে আখ্যায়িত করেন।

 একই সময়ে দিল্লীর প্রধান প্রধান সংবাদ পত্রের সম্পাদক ও অন্যান্য সাংবাদিক এবং সংবাদ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। ১০ই মে ইউএনআই দিল্লী থেকে আমার রাজধানীতে অবস্থান এবং কাজকর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিন প্যারার একটি সংবাদ প্রচার করে। এছাড়া আকাশবাণীর (অল ইণ্ডিয়া রেডিও) কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করি। আকাশবাণীর মহাপরিচালক শ্রী এ কে সেনের পরামর্শ অনুযায়ী আকশবাণীর বহির্বিশ্ব কার্যক্রম, বিশেষ করে উর্দু সার্ভিসের জন্য আমাদের মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে কতগুলো কথিকা রচনা করি। একটি সিরিজ হিসেবে প্রচারের জন্য তিন ভাগে এগুলো লিখি। মূল শিরোনাম ছিল 'Recent events in Bangladesh' উপ-শিরোনামে ছিল- Historical Background (১৯৪৭ সালের আযাদী থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ঘটনার ভাবাবেগবর্জিত সংক্ষিপ্ত তথ্যমূলক বিশ্লেষণ); Election in Pakistan and Aftermath (নির্বাচনের ফলাফল, অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট); এবং শেষেরটি Genocide in Bangladesh (২৫শে মার্চের পরের গণহত্যার বিবরণ এবং পাকিস্তানী মিথ্যা প্রচারণার জবাব)। ইংরেজিতে লেখা এ কথিকাগুলো উর্দূতে অনুবাদ করে আকাশবাণী দিল্লী কেন্দ্রের বহির্বিশ্ব উর্দু সার্ভিসের বিশেষ অনুষ্ঠানে ১৯৭১ এর ২, ৪, এবং ৮ই জুন প্রথম প্রচারিত হয় এবং পরে পুনঃপ্রচারিত হয়। প্রতিটি কথিকার জন্য ১০ মিনিটের বেতার সময় বরাদ্দ ছিল। এছাড়া আকাশবাণী দিল্লীর ‘হামারে মেহমান’ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমার একটি ১০ মিনিটের টিভি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ১৪ মে তারখে। এটি উর্দুতে গৃহীত হয় এবং ভাংগা ভাংগা উর্দুতে আমার বক্তব্য পেশ করি। একই দিন দিল্লী টেলিভিশন তাদের ‘আজকাল’ অনুষ্ঠানে আমার একটি ১০ মিনিটের টিভি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এ সাক্ষাৎকারে একই সাথে দিল্লী সফররত আওয়ামী লীগের ধর্মীয় ফ্রণ্ট আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি জনাব খায়রুল ইসলাম যশোরীর সাক্ষাৎকারও প্রচারিত হয়। শ্রোতাদের সুবিধার্থে এটি হিন্দিতে গৃহীত হয় এবং আমরা ভাংগা ভাংগা হিন্দিতে শ্রোতাদের বোধগম্যভাবে আমাদের বক্তব্য পেশ করি। মওলানা যশোরী তখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ভারতীয় ওলামাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এছাড়া তরুণদের জন্য সর্বভারতীয় অনুষ্ঠান যুব বাণীতেও আমার আরেকটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। আকাশবাণীতে প্রচারিত কথিকাগুলো উর্দু অনুবাদ সাংবাদিক জনাব নজমুল হাসান কয়েকটি উর্দু পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। মে এবং জুন এই দু’মাসে দিল্লীস্থ প্রচারমাধ্যম গুলোর সহায়তায় ব্যাপক প্রচার চালাই। আকাশবাণীতে প্রচারিত কথিকাগুলোর মূল ইংরেজী