পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

গঠিত হয়। উক্ত কমিটির নাম ছিল HARVARD SUMMER SCHOOL COMMITTEE EAST PAKISTAN REFUEES। এখবরটি প্রকাশিত হয় The Harvard Crimson নামক পত্রিকার ৩০ শে জুলাই সংখ্যায়।

 ২৯ আগস্ট থেকে ৭সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোলাকাতায় মহাজাতি সদন ভবনে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের সপ্তদশ বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ এর লোকগাথা অবলম্বনে কবি চন্দ্রবর্তী নামক একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। এ অনুষ্ঠানে অবনীন্দ্র জন্মশবার্ষিকী ও অনুষ্ঠিত হয়। আমি প্রধান অতিথি হিসেবে ২৯ আগস্ট বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন উদ্ধোধন করি। উক্ত সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন আনন্দ বাজার পত্রিকার সম্পাদক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য ডঃ অম্লান দত্ত।

 এ সময় হার্ভার্ড গ্রুপ- এর পক্ষ থেকে অর্থনীতিবিদ গুস্তাভ পাপানেক কোলকাতায় আমার সংগে যোগাযোগ করেন এবং কয়েকদিন বিস্তারিত আলোচনার পর একটি প্রস্তাব ফোর্ড ফাউণ্ডেশন এর কাছে পেশ করেন। প্রস্তাবটি মেমোরেণ্ডাম আকারে ছিল এবং নাম ছিল ‘ longer term problem of Bengali refugee Intellectuals’। মেমোরেণ্ডামে পাপানেকের স্বাক্ষরের তারিখ হচ্ছে ১লা জুলাই ১৯৭১। পাপানেকের এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। শুধু উচ্চতর গবেষণার জন্য বাংলাদেশের দু’জন শিক্ষককে তিনি আমেরিকার অধ্যয়নের বৃত্তি দিতে সক্ষম হন। পাপানেক তাঁর মেমোরেপ্তাম ফোর্ড ফাউণ্ডেশনের জর্জ জাইগেনষ্টাইন-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন।

 কোলকাতায় ওরিয়েণ্ট লংগম্যানস এ সময় ‘বাংলাদেশ ষ্টোরি’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তারা আমার সংগে যোগাযোগ করে এবং আমি তাঁদের সংগে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হই কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে বেশীদূর অগ্রসর হয়নি। আমার সাথে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জন টি মেলবুনি আমাকে অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রণ জানান। এই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সংগে আমার আলোচনা হয়। ১১নভেম্বরে আমি অষ্ট্রেলিয়ায় যাবার জন্য প্রস্তুত হই। কিন্তু অবশেষে পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ায় আমি যাত্রা স্থগিত রাখি। শেষ পর্যন্ত আমার যাওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে একটি কথা উল্লেখ করা দরকার যে, প্রফেসর মেলবুনি অষ্টেলিয়ার মেলবর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ষ্টাডিজ বলে একটি ইনষ্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই ইনষ্টিটিউট শেষ পর্যন্ত হয়নি।

 বিখ্যাত ফরাসী সংবাদপত্র La Monde (লা মঁদ) এ সময় আমার সংগে যোগাযোগ করে এবং জানায় যে তারা বাংলাদেশের কবিতার ওপর একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ১০ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের সংখ্যায় লা মঁদ বাংলাদেশের কিছু কবিতার অনুবাদ এবং আলোচনা পত্রস্থ করেন। সেখানে আমার ‘প্রতিদিনের শব্দ’ কবিতার ফরাসী অনুবাদ মুদ্রতি হয়েছিল। বোম্বই এর Quest পত্রিকা বাংলাদেশ সংখ্যা প্রকাশ করে। উক্ত সংখ্যায় আমার একটি আলোচনা ছিল এবং একটি কবিতা ছিল। আমার প্রবন্ধটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ওপর এবং বাংলাদেশের জনগনের স্বাধীনতার আগ্রহ এবং তাৎপর্যের ওপর।

 সবশেষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা না বললে আমার বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকবে। আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে’ এই নামে কতকগুলি কথিকা প্রচার করি। উক্ত কথিকাগুলোর মধ্যে আমি কোরান শরীফ এবং হাদীস থেকে উদাহরণ উপস্থিত করে প্রমান করার চেষ্টা করেছিলাম যে বাংলাদেশের জনগনের প্রতি পাকিস্তানীদের আচরণ সর্বতোভাবে ইসলামবিরোধী। আমার আলোচনাগুলো জনপ্রিয় হয়েছিল বলে শুনেছি এবং বাংলাদেশের মানুষ সেগুলো শুনেছেন এবং উৎসাহিত বোধ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমি কবিতাও পাঠ করেছি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বেতার কেন্দ্রের দান যথেষ্ট। শুধুমাত্র উচ্চারিত বাণীর সাহয্যে মানুষের চৈতন্যকে যে উদ্বুদ্ধ করা যায় তার প্রমাণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র দিয়েছিল।