পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৩২১

প্রভৃিতি সীমান্তে অবস্থিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ইত্যাদি ঘুরে দেখলাম। যতদুর পারি বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করতে চেষ্টা করলাম। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে খেলাম আর একটি উদ্দেশ্য ছিল পিতৃদিবের সন্ধান। মুক্তিযুদ্ধে আরম্ভ হওয়ার সাথে সাথেই তাঁর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২৫শে মার্চে তিনি ছিলেন দিনাজপুর, আর আমারা ঢাকায়। কোথাও তার সন্ধান মিলল না। আবশেষে দিনাজপুর সীমান্তের কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধাদের এক শিবিরে তার সন্ধান পেলাম। দিনাজপুর শহরের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানাল যে বাবা গ্রামের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা আরো জানাল যে সেই গ্রামটি বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ভাল আশ্রয়স্থল বাবা মুক্তিযোদ্ধদের নিরাপদ আশ্রয় দান ইত্যাদি কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন।

 অবশেষে কোলকাতা পৌছলাম জুন মাসের মাঝামাঝিতে। আশ্রয় পেলাম মাসীমার ভবানীরপুরস্থ বাসায়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সাথে দেখা করলাম তিনি আমাকে বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যানিং সেলের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করার নির্দেশ দিলেন। যোগাযোগ হল ডঃ এ আর মল্লিক ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ খান সারওয়ার মুর্শিদ, আধ্যাপক আলী আহসান ও আন্যান্য আনেকের সাথে। মুক্তিযুদ্ধের কাজে সর্বাত্বকভাবে নেমে পড়লাম। ডঃ আনিসুজ্জামান সরকারের বিশেষ কাজে জড়িয়ে পড়ায় মে মাসে গঠিত বাংরাদেশ শিক্ষক সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ত আমার উপর বর্তাল।

 অবরুদ্ধ ঢাকয় অবস্থানকালে ও বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে নারকীয় হত্যার আকটি প্রতিদেন আমরা তৈরী করেছিলাম। তার সংক্ষিপ্তসার এখানে উল্লেখিত হল। এই প্রতিবেদনে আমরা পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ বহু ব্যাক্তি, সংঠন ও সরকারের কাছে প্রেরণ করি।


 ঢাকর ঘটনাঃ ২৫শে মার্চ জগন্নাথ হল ও তৎপপার্শ্ববর্তী এলাকায় সংগঠিত হয় সবচাইতে বড় নরহত্যা। জগন্নাথ হলের যে সব নিহত ছাত্র ও কর্মচারির নাম সংগ্রহ করা হয়েছিল- সর্বশ্রী স্বপন চৌধুরী (ছাত্রনেতা গণপতি হালদার, সুশীল দাশ (সহ-সাধারন সম্পাদক), রমণীমোহন ভট্টাচার্য, রণদা রায়, সুভাষ চক্রবর্তী, প্রবীর পাল, কিশোর মোহন সরকার, ভবতোষ ভৌমিক, বরদা কান্ত তরদার, সত্যদাস, কার্তিক শীল পল্টনদাস, কেসব চন্দ্র হালদার, নির্মল কুমার রায়, সুজিত দত্ত, রবীন্দ্র রায়, বিধান ঘোষ, মৃনাল বোস, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, অজিত রায় চৌধুরী, সত্যনাগ, রুপেন্দ্র সেন, মুরারী বিশ্বাস, বিমল রায়, প্রদিপ নারায়ণ রায় চৌধুরী, নিরঞ্জন চন্দ্র, সুব্রত সাহা, প্রিয়নাথ (৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী), দুখী রাম (৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী), সুনিল দাস (৪থ শ্রেণীর কর্মচারী), শংকর মোদক (৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী) খগেন্দ্র চন্দ্র দে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, মতিলাল দে (৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী), রাজভর (৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী), লতিফুর রহমান (অতিথি ছাত্র), বদরুদোজ্জা (অতিথি ছাত্র), মহতাব উদ্দিন (অতিথি ছাত্র), এবং আরও বহু ছাত্র যাদের নাম সংগ্রহ করা আর কোনদিনই হয়ত সম্ভব হবেনা।

 এছাড়া ইকবাল হলেও বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী এবং আশ্রয়প্রার্থী বস্তি এলাকার অসংখ্য নরনারী।

 এই গনহত্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও যে সব কর্মচারী নিহত তারা হলেন: মধুদে- সকলের মধু দা, বিশ্বদ্যিালয়ের ক্যাণ্টিনের মালিক ও তার স্ত্রী, বড় ছেলে এবং পুত্রবধু, ননীরাজভর, রোকেয়া হলের দারোয়ান ও স্ত্রী ও সকল সন্তানসন্ততি, খগেন দে, দর্শন বিভাগের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, শামসুল মোল্লা ইকবাল হলের দারোয়ান, রোকেয়া হলের দারোয়ান মইনুদ্দিনের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও পুত্রবধু, চুন্নু মিয়া, রোকেয়া হলের মালী আব্দুল খালেক, রোকেয়া হলের মালী, পিয়ার মোহাম্মদ, রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন ২৭ শে মার্চ ঢাকা থেকে পালাতে গিয়ে রাস্তয় নিহত হয়।