পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
৩২২

 এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে পাঁচটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। এদের ৪ জন হল ক্লাবের বেয়ারার, অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি- সম্ভবত ওদের কারও অতিথিঃ আব্দুল মজিদ, সিরাজুল হক, সোহরাব হোসেন, আলী হোসেন।

 ২৫শে মার্চ থেকে ২৯ শে মার্চের মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যা বা আহত করা হয়েছিল:

 প্রফেসর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক ও দর্শন বিভাগের পধান। ২৬ শে মার্চ প্রাতঃকালে প্রার্থনারত অবস্থায় প্রথমে বন্দুকের গুলিতে পরে সঙ্গিনের খোঁচায় হত্যা করা হয়। তার মুসলিম পরক পুত্রকে ও হত্যা করা হয় একই সাথে। মুহাম্মদ মুনিরুজ্জমান, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান, তকে তার ভই, এক ছেলে ও ভইপোসহ ২৬ শে মার্চের সকালে হত্যা করা হয়। মুহাম্মদ মুকতাদির, ভূতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র লেকচারার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড আবাসিক এলাকায় তার বাসভবনে ২৬ শে মার্চ সকালে হত্যা করা হয়। শ্রী অদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্চ, লেকচারার পলিত পদার্থবিদ্যা বিবাগের গৃহশিক্ষক জগন্নাথ হল। হলের মধ্যে তার বাস ভবনের বাথরুমের লুকিয়ে ছিলেন ২৫ শে মার্চ রাতে সেনবাহিনীর লোকজন ওখোনে তাঁকে হত্যা করে। ডক্টর জোতির্ময় গুহঠাকুরতা, রীডার ইংরেজী বিভাগ, প্রোভস্ট জগনাথ হল; ২৬ শে মার্চ সকালে হত্যা করা হয়। শ্রী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টচার্য অধ্যাপক রাজ্জাক ও মিসেস গুহঠাকুরতা তাবেবাসায় য়য়ে আসেন। ২৭ শে মার্চ সকালে হাসপাত নিয়ে যাওয়া হয়, ২৯শে মার্চ হাসপাতালে মারা যান। মুহাম্মদ সাদেক, ডাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুলের শিক্ষক, ফুলার রোড এলাকায় তার বাসভবনে তাকে হত্যা করা হয়। ২৭ শে মার্চ সকালে তাকে বাসভবনের পিচনের মঠে কবরস্থ করা হয়। ড. ফজলুর রহমান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র ললেকচারার, তাকে এবং তার এক ভাইপোকে নীলক্ষেত এলাকায় তার বাসভবনে হত্যা করা হয়। একই সাথে এ ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়া অসংখ্য বস্তিবাসীকেও হত্যা করা হয়। ঐ সব লাশ দীর্ঘদিন ধরে ছাদে পড়ে ছিল। জনাব এ আর খান খাদিম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের লেকচারার, ঢাকা হল (শহীদুল্লাহ হল) সংলগ্ন কর্মচারীদের আবাসস্থলের তাকে ২৬শে মার্চ হত্যা করা হয়। জনাব শরাফত আলী লেকচারার গণিত বিভাগ, একই স্থানে একই সময় তাকে ও হত্যা করা হয়। এছাড়া এই স্থানে আরও তিনজকে হত্যা করা হয় যাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ড. মুহাম্মদ শহাদত আলী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট সিনিয়র লেকচারার ২৬শে এপ্রিল ডাকা থেকে তার বাড়ী নরসিংদী যাওয়ার পথে পাক ফৌজের হাতে নিহত হন।

 ঐ কাল রাত্রিতে এবং তৎপরবর্তী নিম্নলিখিত শিক্ষকগণ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন:

 প্রফেসর এম ইন্নাস আলী, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। আধ্যাপক ও তদীয় পুত্র ফিরোজ আলীকে পাক বাহিনীর একটি দল ২৫শে মার্চ রাত্রে নীলক্ষেতস্ত বাসভবনে প্রবেশ করে তাদের প্রতি লক্ষ করে গুলি করে। এর ফলে তারা ইভয়েই আহত হন। পরে তাদের হাসপাতপলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখানে আরোগ্য লাভ করেন। অধ্যাপক এ কে রফিকুল্লাহ রীডার পদার্থবিদ্যা বিভাগ, ৩১ শে মার্চ জিঞ্জিরা থেকে সপরিবারে নৌকাযোগে পলায়ন কালে পাক বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রফেসর এম এন হুদা অর্থনীতির অধ্যাপক, ২৫শে মার্চ রাত্র জগন্নাথ হলের নিকট তার বাসভবনে ঢুকে তার প্রতি গুলি ছোড়া হয়- সৌভাগ্যবশত তিনি রক্ষা পান। প্রফেসর মফিজুল্লাহ কবীর, ইতিহাসের অধ্যাপক ও সলিমুল্লাহ হলের প্রভোষ্ট, শহীদ মিনারের নিকট তার বাসভবনে ২৫ শে মার্চ গভির রাত্রে আত্মগোপন করে রক্ষা পননি। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, রাষ্ট্রবিজ্ঞাণ বিভাগের অধ্যাপক ২৫ শে মার্চ রাত্রে শহীদুজ্জামনের নিকটস্থ তার বাসভবনের একটি কক্ষে আত্মগোপন করে অলৌকিকভাবে রক্ষা পান।