পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খন্ড

স্বাধীনতার সংগ্রাম- গাজীউল হক, ইণ্ডিয়ান আসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং কোলকাতা, পাকশিত। এছাড়াও বিভিন্ন সমিবিবাংলাদেশ সম্পর্কিত তথ্য ও মুক্তিযোদ্ধের পরিস্থিতি ও গণহত্য সম্পর্কিত প্রতিবেদন বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সঙবাদপত্র এত্যাদিতে প্রেরন করে। আমাদের এই কর্মতৎপরতার ফলে বিশ্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে।

 কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংরাদেশ সহায়ক সমিতির সক্রিয় সহযোগিতা উদ্যোগে আমরা কতিপয় প্রতিনিধিদল বিদেশেও প্রেরন করি বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এই দুই সমিতরি পক্ষ থেকে শ্রীযুক্ত ন্নিাথ ব্যানার্জী (১৯২২ সালে কাব লে ‘মকতবই হাবিবিয়ার শিক্ষক ছিলেন) আফগানিস্তান গমন করেন ‘৭১-এর অক্টোবর মাসে। তিনি সেখানের বাদশা খান ও তদীয় পুত্র ন্যাপ নেতা ওয়ারী খানের সাথে, আফগান পার্লামেণ্টের সদস্যদেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন লাভে চেষ্টা করেন। এ ছাড়া তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রচরণার কাজে পরিভ্রমণ করেন। এছাড়া কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ভাষাসমুহের বিভাগের প্রধান ফাদার পি ফাঁলো (P. Fallon) আমাদের দুই সমিতির পক্ষ থেকে জুন মাসে ভ্যাটিকান শহরের মহামান্য পোপের সাথে সাক্ষা করে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পের্কে পোপকে জ্ঞাত করান ববেং আমাদের সমর্থনে বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে তিনি একই উদ্দেশ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন। পরে তিনি একই উদ্দেশ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ভ্রমন করেন।

 সমিতি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, পুস্তক, দলিল ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ আর্কাইভস কমিটি গঠন করেন। বরে পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান। এছাড়া কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির উদ্যোগে ও সহযোগিতায় আমাদের বাংলাদেশ তথ্য ব্যাংক গঠন করি। এই ব্যাংক দেশী-বিদেশী দৈনিক পত্রিকা, জার্নাল প্রভৃতি থেকে বাংরাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ও আনুষঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করার কাজে ব্যাস্ত থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ১৪ জন ছত্র-ছত্রীকে এই কার্যে নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন জনাব জামিল চৌধুরী। পরে ড. এ আর মজুমদারকে এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই প্রকল্পে আমরা প্রবিন ভারতীয় সাংবাদিক শ্রী দুর্গাদাস তরফদার এবং শ্রী রামরায়ের অকুণ্ঠ সহোযোগিতা পাই। যুদ্ধ শেষে ব্যাংক সংগৃহীত তথ্যাবলী ঢাকা যাদুগরে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ আর্কাইভস সংগৃহীহ কাগজপত্রাদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

 অন্যান্য সহযোগী সহায়ক সংগঠনের সহায়তায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে তিন প্রকার সহায়তা দানের চেষ্টা করি।

 (১) সীমিত সাধ্যে কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক অনুদান। (২) মুক্তিযুদ্ধে প্রয়োজনীয় বেসামরিক উপকরণ যেমন কম্বল, শীতবস্ত্র, পোশাক, জুতা ইত্যদি ও বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা যুবশিবিরসমুহে প্রেরনের ব্যাবস্থা। (৩) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা প্রোয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ঔষধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহ ও বিভিন্ন রণাঙ্গনে প্রেরণ। এ ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশ ভলাণ্টিয়ার্স কোর- এর সাথে একসঙ্গে কাজ করেছি। এ প্রসঙ্গে ঐ সংগঠনের পরিচালক জনাব আমিরুল ইসলাম ও উপপরিচালক জনাব মামুনুর রশীদ কর্মতৎপরতার কথা স্মরণযোগ্য।

 কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির উদ্যোগে গঠিত মেডিকেল ইউনিট এ ব্যাপারে আমাদের সর্বাদিক সহায়তা করে। শ্রীমতি মৃন্ময়ী বোসের নেতৃত্বাধীন পরিচালক এই ইউনিট ভারতীয় রেড ক্রসের সহযোগিতায় এবং শ্রীমতি পদ্মজা নাইডুর ব্যক্তিগত প্রচেষাটা অব্যাহতভাবে ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষক সমিতির পক্ষে এই প্রচেষ্টার নিরলসভাবে কাজ করেন বেশ কিছু সদস্য এদের মধ্যে নিহত গোপাল সাহা, সকুমার বিশ্বাস, ইমরুল কায়সার প্রভৃতির নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে।