পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



প্রাক কথন

 ১৯৭৭-৭৮ থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ আট বছরকাল একদল গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে ১৫ খণ্ডে মুদ্রিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র এই পর্যায়ে প্রকল্পটির সমাপ্তিকাল হচ্ছে ১৯৮৫ সালের ৩০শে জুন। এরপরও এই প্রকল্পের সমাপ্তিকরণ সংক্রান্ত কাজের জন্য আরও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। অবশেষে প্রথম পর্যায়ে ১৫ খণ্ডে মুদ্রিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলভিত্তিক এই বইগুলো গবেষক ও পাঠকদের সমীপে উপস্থাপনা করতে পেরে আমরা আজ গর্ব অনুভব করছি।

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র- এই নামকরণ থেকেই আমরা একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমাদের এই প্রচেষ্টা ও উদ্যম কোন দিক থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য নয়। আমরা যেটুকু করেছি, তা হচ্ছে ভবিষ্যতে গবেষক ও ইতিহাসবিদরা যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস প্রণয়ন করতে সক্ষম হন, সেই লক্ষ্যে যুদ্ধসংক্রান্ত সংগৃহীত দলিলপত্র এবং সংশ্লিষ্ট বহুসংখ্যক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারগুলো সন্নিবেশিত করা। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের সংগৃহীত দলিলপত্র এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার ও বিবৃতিগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রচনার জন্য কেবলমাত্র একটা রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক মনে করবো।

 বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এখানে আরও একটি বিষয়ের অবতারণা করা বাঞ্ছনীয় হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রামাণ্যকরণ কমিটি কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিটি দলিল, সাক্ষাৎকার ও বিবৃতি অনুমোদন করার পর আমরা সেসব এই ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশিত করেছি। অর্থাৎ প্রামাণ্যকরণ কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোন দলিল, সাক্ষাৎকার কিংবা বিবৃতি এর অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

 সংক্ষেপে এই প্রকল্পের কথা বলতে গেলে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ছয় বছর পর সরকার এ ব্যাপারে তৎপর হলে ১৯৭৭-৭৮ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্পের সূচনা হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কবি হাসান হাফিজুর রহমানের পরিচালনায় এই প্রকল্পের গবেষক ও কর্মীরা সীমিত সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও অমানুষিক পরিশ্রম করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলপত্র, আলোকচিত্র, পত্র-পত্রিকা, প্রচার-পুস্তিকা, সংবাদপত্রের কাটিং, গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, স্মারকলিপি, সাক্ষাৎকার, বিবৃতি এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহে লিপ্ত হন। এরপর শুরু হয় নথিপত্রের সংরক্ষণ, বাছাই এবং গ্রন্থনার কাজ।

 এখানে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে যে, প্রকল্পের কাজ সামগ্রিকভাবে সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিচালক কবি হাসান হাফিজুর রহমানের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ইহজগত থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তিনি যে শুধু কয়েকটি খণ্ডের মুদ্রণ সমাপ্ত করেছেন তাই-ই নয়, প্রস্তাবিত ১৫ খণ্ডের সমস্ত পাণ্ডুলিপি তৈরী ও অনুমোদন করানো (১৫ নং খণ্ড ব্যতীত) ছাড়াও তিনি এসব মুদ্রণের প্রারম্ভিক ব্যবস্থা পর্যন্ত করে গেছেন। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের এই ১৫ খণ্ডই হচ্ছে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এবং তিনিই হচ্ছেন এসবের মূল কৃতিত্বের দাবীদার।

 এরপর একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। উপরন্তু সরকারী মুদ্রণালয়ের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ ছাপাখানাও মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজে নানা অজুহাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। অবশেষে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় নানা ঘাত-পতিঘাতের মাঝ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ১৯৮৪-৮৫ আর্থিক বছরে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় আরও ৭৩টি ফর্মা মুদ্রণ ছাড়াও শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ কপি বাঁধাই-এর কাজ অসম্পূর্ণ ছিলো। এ ছাড়াও ছিলো গুদামজাতকরণ এবং বিক্রয় ও বিতরণ সংক্রান্ত দুরূহ কাজ। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই আরও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।