পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

77 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২৭ আগষ্ট, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণরক্ষার জন্য অবিলম্বে সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্বের সকল সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিশ্বের সকল সরকারের কাছে পাঠানো এক বার্তায় তাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেনঃ বাংলাদেশে আজ যা ঘটেছে এবং যা ঘটতে যাচ্ছে, তাকে বিশ্বশান্তি আজ দারুণ এক হুমকির সম্মুখীন। পাকিস্তানের জঙ্গশাহীকে কোনরকম সামরিক অথবা অর্থনৈতিক সাহায্যদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্যেও তাঁরা বিশ্বের সরকারবর্গের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। হংকং-এর একটি প্রভাবশালী দৈনিক হংকং স্ট্যাণ্ডার্ড-এ শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসনের জন্যে পাকিস্তানের জঙ্গী সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। এই পত্রিকার এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়ঃ সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের নামে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা যা করতে যাচ্ছে তা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বিচার প্রহসনের পেছনে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার যে গোপন দুরভিসন্ধি রয়েছে তা বীভৎস। পত্রিকায় বলা হয়ঃ সম্প্রতি পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী ঘোষণা করেছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে একজন কৌঁসুলি নিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে কো কোঁসুলি থাক আর না-ই থাক এটা স্রেফ একটা ধাপ্পা ও প্রসহন ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ ইয়াহিয়া আর জঙ্গ সরকার ইতিপূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাকতার অভিযোগ এনেছে। তারা যে ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে আগেভাবেই দোষী বলে ঘোষণা করছে সেখানে এই বিচার স্রেফ একটি প্রহসন ছাড়া আর কি হতে পারে? আইরিশ আইনজীবী সমিতির অত্যন্ত প্রভাবশালী সদস্য ও রাজনৈতিক বন্দী মার্জনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার চেয়াম্যান মিঃ সিয়ান ম্যাকব্রাইড জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে লেখা এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু তিনি সেখানে গিয়ে তখন কিছুই করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু মুজিবের বিচার গোপনে সামরিক আদালতে না করে প্রকাশ্যে বেসামরিক আদালতে করার দাবী জানিয়ে মিঃ ম্যাকব্রাইড বলেনঃ কোন বিদেশী আইনজীবীকে পাকিস্তানের আদালতে শেখের পক্ষ সমর্থনের অনুমতি যদি না দেয়া হয় তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান যাতে তাঁর ইচ্ছেমতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন তার ব্যবস্থা যেন করা হয়। মিঃ ম্যাকব্রাইড গত মাসে তাঁর পশ্চিম পাকিস্তান সফরের উল্লেখ করে বলেনঃ শেখ মুজিবুর রহমানের লণ্ডন সলিসিটরদের অনুরোধে তিনি বাংলাদেশের নেতার পক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্য নিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানে দেখা করে শেখের বিচার যেভাবে চলছে সে সম্পর্কে দারুণ উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেনঃ রাজনৈতিক বন্দীদের মার্জনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান হিসাবে তিনি বিচারের কতগুলো উদ্বেগপূর্ণ দিক সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেনঃ সামরিক আদালতে গোপনে শেখ মুজিবুর রহমানের যে বিচার চলছে তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রকাশ করা হয়নি। এর মধ্যে শুধু একটাই বলা হয়েছে যে, অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তিনি বলেন, বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যদি তার ইচ্ছামতো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে সে বিচার বলে গণ্য হতে পারে না।