পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস সু্যম্যান বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশ সংকটের সমাধান করতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের সংকট আরও বিস্তার লাভ করবে। ২ অক্টোবর, ১৯৭১ বাংলাদেশে সাধারন মানুষের উপর পাকিস্তানী হানাদারদের অমানুষিক অত্যাচার ও বর্বরতার মর্মান্তিক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধি মিঃ টাইগারম্যান পদত্যাগ করেছেন। মিঃ টাইগারম্যান গত ছ’বছর ধরে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাঙ্কের একজন বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর তিনি গত ডিসেম্বর মাসে শিকাগো গিয়েছিলেন। মিঃ টাইগারম্যান একজন মার্কিন নাগরিক। তিনি শিকাগো থেকে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন। মিঃ টাইগারম্যান বলেনঃ বাংলাদেশ অত্যন্ত পরিচিত দেশ। এদেশে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসাবে যোগদানের পর এখানকার প্রতিটি জিলা প্রতিটি শহর-বন্দরে গ্রামে-গঞ্জে আমি ঘুরেছি। ঘুরেছি একবার নয়, বার বার। বাংলাদেশের জেলাগুলোয় তিনি এ পর্যন্ত ঘুরেছেন ১৮ বার। গত ৮ই সেপ্টেম্বরে আবার তিনি ঢাকায় ফিরে এলেন তখন তিনি বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ বিমান থেকে নেমেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার সেই পরিচিত ঢাকা বিমানবন্দর এ যেন নয়। এ যেন বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কোন বিমান ঘাঁটি। বিমান বন্দরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলোকে প্রস্তুত হয়ে থাকতে দেখলাম। দেখলাম বিমানবন্দরের চারিদিকে অসংখ্য বিমানবিধ্বংসী কামান। টার্মিনাল ভবনের ছাদে, জানালায় আর চিলতে ছাদ বা বারান্দাগুলোয় দেখলাম বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার করা হয়েছে এবং সেখানে সশস্ত্র পাকিস্তানী সৈন্যরা বিমানবিধ্বংসী কামান, মেশিনগান ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে আছে যেন এখুনি কিছু ঘটবে বা ঘটতে যাচ্ছে। আগে যেখানে বিমানবন্দরের পূর্বপাশে রাস্তায় প্রাচীরের ধারে এবং ডমেষ্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল উইংসের টার্মিনাল ভবনে হাজার হাজার দর্শনার্থীকে দেখতাম লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে এখন সেক্ষেত্রে একজন অসামরিক ব্যক্তিকেও দেখলাম না। আগে বিমানবন্দরে যেসব অসামরিক কাষ্টম ও ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মচারীদের দেখতাম, তাদের কাউকেই দেখলাম না। হয় তাদের সবাইকে গুলি করে মারা হয়েছে, অথবা তারা প্রাণভয়ে এ শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বিমানবন্দরে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরাই সবকিছু করছে। বিমানবন্দরে যেসব বিদেশী নাগরিক যাওয়া-আসা করছে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের নানাভাবে নাজেহাল করছে। পিআইএ বা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের যে সাজ-সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও সৈন্যদের পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিঃ টাইগারম্যান বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে একজন বাঙালীকেও আমি খুঁজে পেলাম না। অথচ দেশটা একান্তভাবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর দেশ। বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতিনিধি মিঃ টাইগারম্যান বলেনঃ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আমি দেখলাম এয়ারপোর্ট রোডের দু’পাশে বহু ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছে এবং রাস্তার দুধারের বাড়িগুলি জনশূন্য। আর এইসব জনশূন্য বাড়িগুলির ছাদে, বারান্দায় ও জানালায় বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার বানানো হয়েছে। রাস্তায় দু’হাত ছাড়া চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। এইসব চেকপোষ্টে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে কথিত যে দু-একটা অসামরিক গাড়ী চলাচল করছে সৈন্যরা সেগুলো তন্নতন্ন করে তল্লাশী করছে। পথচারীদেরও তল্লাশী করা হচ্ছে। পথচারীদের বেশভূষা ও চেহারায় বাঙালীত্বের স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গেলে সৈন্যরা তাদের ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টর দিকে যাচ্ছে। বাঙালী বুদ্ধিজীবী তরুণ হলে তো আর কথাই নেই। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় যুদ্ধক্ষেত্র সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। সারি সারি বাঙ্কার ও ট্রেঞ্চে সশস্ত্র পাকিস্তানী সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। জায়গায় জায়গায় রাস্তার দুপাশে দেয়াল তুলে দিয়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরের প্রধান প্রধান সরকারী ভবনগুলোর চারপাশে ১৫