পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

82 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১ ...গত বাইশে অক্টোবর থেকে পচিশে অক্টোবরে মধ্যে নয়াদিল্লীতে ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা হয় তাতে এই উপমহাদেশের পরিস্থিতি এবং পাকিস্তান ভারতের সীমান্তে যে গুণ্ডামি ও তস্করবৃত্তির দেশের মধ্যে চারদিনব্যাপী আলোচনার পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়ঃ পাকিস্তান ভারত সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করে এবং যুদ্ধপ্রস্তুতি ও সামরিক তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে এই উপমহাদেশে যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে তাতে এ অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবার দারুণ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারত যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সোভিয়েট ইউনিয়নের তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সুতরাং ভারত আক্রমণ করে বাংলাদেশ প্রশ্নকে ভারত-পাকিস্তান প্রশ্নে রূপান্তরিত করার সপক্ষে এবং পরে জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে ত্রাণ পাওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছে তাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে গেছে। আজ ভারত আক্রমণের অর্থ হবে পাকিস্তানের আত্মহত্যা, ভারত আক্রমণ করতে গেলে গোটা পাকিস্তানটাই কবর হয়ে যাবে। গত ছাব্বিশে অক্টোবর মস্কো ও অটোয়ায় যুগপৎভাবে প্রকাশিত সোভিয়েট-কানাডা যুক্ত ইশতাহারে বাংলাদেশ সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক সমাধানের দাবী জানানো হয়। সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং কানাডার এই যুক্ত ইশতাহারে বলা হয়ঃ বাংলাদেশ পরিস্থিতির এমন একটি রাজনৈতিক সমাধান আনতে হবে যাতে বাংলাদেশের জনগণের আইনসম্মত অধিকার ও স্বার্থ সম্পূর্ণ রক্ষিত এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীরা পূর্ণ আস্থায় ও মর্যাদায় দেশে ফিরে আসতে পারবেন। কানাডায় সোভিয়েট প্রধানমন্ত্রী মিঃ আলেক্সী কোসিগিনের আটদিনব্যাপী সরকারী সফরশেষে এই ইশতাহার প্রচারিত হয়। ১ নভেম্বর ১৯৭১ পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্রীবাদী উভয় ব্লকেই এই সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছেই জোটনিরপেক্ষ যুগোশ্লাভিয়া সমানভাবে সমাদৃত। গোষ্ঠীনিরপেক্ষ যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট টিটোও আজ বাংলাদেশের পাকিস্তানী বর্বরতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট টিটো বলেছেনঃ বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যা করেছে এবং আজও তারা সেখানে যা করে চলেছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার কোন দৃষ্টান্ত নেই। পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশে যে ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সেখানকার নিরপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার ও বর্বরতা চালিয়েছে তার ফলেই বাংলাদেশ থেকে নব্বই লক্ষাধিক শরণার্থী তাদের ঘরবাড়ি সহায়-সম্বল ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াসহ গোটা সরকারী প্রচারযন্ত্র এতদিন প্রচার করে এসেছিলেন যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালী মুষ্টিমেয় অবাঙালীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলো, আর তাকেই থামাতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করে জনগণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে বাংলাদেশের মানুষ আজ দেশ থেকে হানাদার নিশ্চিহ্ন করার যে দুর্বার অভিযান চালিয়েছে তাকে দুষ্কৃতকারী ও ভারতীয় অনুচরদের কার্যকলাপ বলে ইয়াহিয়া সরকার কতদিন যাবৎ প্রচার করে এসেছে।